‘আর কত প্রাণ ঝরলে আপনারা মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করবেন?’
'স্যার, আমার ভাই নির্দোষ, সে তো সিগারেট পর্যন্ত খেত না। স্যার, ক্যাম্পের ভেতরে যারা এসব ঘটাচ্ছে, আর কত প্রাণ হারালে আপনারা সেই মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করবেন?'—কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই আর্তনাদ করছিলেন ২৮ বছর বয়সী আজমেরী বেগম।
গতকাল বুধবার (২২ অক্টোবর) রাতে তার ভাই জাহিদ (২০) মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে ট্রমা সেন্টারে নেওয়া হয়, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে চিকিৎসকরা ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজ সকালে ঢামেক মর্গে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে আহাজারি ও কান্নার শব্দে ভারী হয়ে আছে বাতাস। পাঁচ-ছয়জন স্বজন মর্গের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কেউ কেউ বিলাপ করছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে জাহিদের বন্ধু মাহতাবের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা কথা বলছিলেন। বিস্ফোরণের সময় তিনি জাহিদের সঙ্গে ছিলেন।
মাহতাবকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় আজমেরী বেগম বারবার বলছিলেন, 'স্যার, আমি ওদের সবাইকে চিনি, দয়া করে ওদের ধরেন।' কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'যখন জাহিদের বয়স তিন মাস তখন আমাদের বাবা মারা যান। মা দুই বছর আগে মারা গেছেন। অনেক কষ্টে বড় করেছেন আমাদের। সাত ভাইবোনের মধ্যে জাহিদ ছিল সবার আদরের।'
জাহিদ আজমেরী বেগমের পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন। তিনি কল্যানপুরের মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে কাজ করতেন। দোকানটি পরিচালনা করেন তার ভগ্নিপতি উজ্জ্বল; জাহিদের আরেক বোন মালেকার স্বামী তিনি।
জাহিদের বন্ধু মাহতাব জানান, বিস্ফোরণের পর তিনিই প্রথম তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তার বর্ণনায়, তিনি, জাহিদ ও আরেক বন্ধু সজল রাতে ক্যাম্পের ভেতরে অনুরাগ নামে একটি চায়ের দোকানে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেল ও চুহা সেলিমের নেতৃত্বাধীন দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
'চুহা সেলিমের গ্রুপে ছিল ৮–১০ জন, কারও হাতে ধারালো অস্ত্র, কারও কাছে পিস্তল ও ককটেল ছিল। অন্যদিকে বুনিয়া সোহেলের দলে ছিল দুজন। আমরা দুই দলের মাঝখানে পড়ে যাই,' বলেন মাহতাব।
তিনি আরও জানান, চুহা সেলিমের গ্রুপের গোলাবু (১২) ককটেল ছুঁড়লে সেটি জাহিদের গায়ে লাগে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং পরে মারা যান।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী রফিক বলেন, 'দুই গ্রুপের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে সকালে আমরা জানতে পারি, সংঘর্ষে জাহিদ নামে একজন মারা গেছেন। এখনও মামলা দায়ের হয়নি।'
