১০ দিনে দেশে টাইফয়েডের টিকা নিয়েছে দেড় কোটির বেশি শিশু
চলমান টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির প্রথম ১০ দিনেই ১ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশুকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে এই কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পরিচালিত এই টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৮০–৮৫ শতাংশ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক শিক্ষক ধর্মঘটের কারণে কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টিকাদানের হার তুলনামূলকভাবে কম।
বিস্তৃত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, স্কুলগুলো পুরোপুরি খুললে টিকাদানের হার আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্তমানে স্কুল এবং স্থায়ী ইপিআই সেন্টারগুলোতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে ইপিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পেও এই টিকা দেওয়া হবে।
এখন পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছে, বড় কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
টিকাদান কর্মসূচিত আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
এই টিকা 'টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন' (টিসিভি), যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত। এটি উদ্ভাবন করেছে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে), উৎপাদন করছে ভারতের বায়োলজিক্যাল ই কোম্পানি এবং গ্যাভি—দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে এটি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এক ডোজের এই টিকা তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। এবং পাকিস্তান, নেপাল ও ভারতে সফলভাবে এটি ব্যবহার করা হয়েছে।
ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও গুজবের কারণে কিছু কেন্দ্রে টিকাগ্রহণের হার কিছুটা কমেছে।
তিনি বলেন, "এই গুজবগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটি কোনো পরীক্ষামূলক টিকা নয়; এটি ডব্লিউএইচও-স্বীকৃত এবং সম্পূর্ণ অনুমোদিত। ভুল ধারণার কারণে যেন বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের টিকা দিতে বিরত না থাকেন।"
তিনি আরও বলেন, "যেভাবে আইফোন চীনে তৈরি হলেও সারা বিশ্বে বিশ্বাসযোগ্য, ঠিক তেমনিই এই টিকাও ভারতে উৎপাদিত হলেও এটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, টাইফয়েড হলো স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি মারাত্মক সংক্রমণ, যা সাধারণত দূষিত খাদ্য বা পানির মাধ্যমে ছড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, মাথাব্যথা, বমিভাব ও হজমজনিত সমস্যার সৃষ্টি করে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান জানান, ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে মারা যায়, যার মধ্যে ৬৮ শতাংশই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু।
বর্তমানে ২ কোটিরও বেশি শিশু টিকাদানের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে। সময়মতো সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অভিভাবকদের গুজবে প্রভাবিত না হয়ে দ্রুত তাদের সন্তানদের টিকা দিতে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে ( https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv ) নিবন্ধনের আহ্বান জানিয়েছে।
