ভারতের সঙ্গে ১০ চুক্তি বাতিলের খবর সঠিক নয়, তালিকার বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবে নেই: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভারতের সঙ্গে ১০টি চুক্তি ও প্রকল্প বাতিলের যে তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি জানান, বিগত সরকারের আমলের ভারতের সঙ্গে লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় কেবল একটি চুক্তিই বাতিল করা হয়েছে, তা হলো গার্ডেনরিচ শিপইয়ার্ডের সঙ্গে টাগবোট কেনার চুক্তি।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'যে তালিকাটা এসেছে, এটা কোনো একজন দিয়েছেন, প্রচার করেছেন। সেটা সম্ভবত কোনো একজন উপদেষ্টা রিটুইট করেছেন, তার একটা কমেন্টসহ। কমেন্টটা নিয়ে আমি কোনো কমেন্ট করতে চাই না। হয়তো এটা উনি না করলেও পারতেন।'
'যে তালিকাটা এসেছে ওখানে, এটা সঠিক নয়। এর অধিকাংশ এক্সিস্ট করে না আদৌ। গার্ডেনরিচ শিপইয়ার্ডের সাথে যে চুক্তিটা, ওই একটা চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এটা তো আপনারা জানেন, এটা তো অনেক পুরোনো ব্যাপার, অনেকদিন আগেই করা হয়েছে', বলেন উপদেষ্টা।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত রোববার (১৯ অক্টবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ১০টি প্রকল্প ও চুক্তি 'বাতিলের' তথ্য দিয়ে একটি ফটোকার্ড শেয়ার দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সেখানে একটি তালিকা দিয়ে শিরোনামে লেখা হয়, 'হাসিনা সরকারের আমলে ভারতের সাথে করা ১০ চুক্তি বাতিল, বাকিগুলোও বিবেচনাধীন।'
তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ওই তালিকার মধ্যে থাকা ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম রেল সংযোগ, অভয়নগর-আখাউড়া রেলপথ সম্প্রসারণ, আশুগঞ্জ-আগরতলা করিডোর, ফেনী নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন প্রকল্প, সিলেট-শিলচর সংযোগ প্রকল্প এবং পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সম্প্রসারণ চুক্তি—এই নামে কোনো প্রকল্প বাস্তবে নেই। কিছু প্রকল্প বাস্তবে আছে, তবে তার নাম বা বিবরণ ভিন্ন।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'আশুগঞ্জ-আগরতলা করিডোর, এই নামে নেই কিছু। আছে যেটা সেটা হলো, আশুগঞ্জ-সরাইল-ধরখার প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্প চলমান আছে। এটার একটা প্যাকেজ বাতিল হয়েছে। খুব ডিটেইলস...এই ডিটেইলস হয়তো রেল মিনিস্ট্রি হয়তো ভালো বলতে পারবে। এটার একটা অংশ বাতিল হয়েছে, বাকিটুকু চালু আছে।'
তিনি জানান, ফেনী নদীর পানি ব্যবস্থাপনা নামে কোনো প্রকল্প নেই। শুধু সমঝোতা স্মারক আছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনের জন্য ২০২২ সালে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকও এখনও স্থগিত হয়নি।
'বন্দরের ব্যবহার সংক্রান্ত সড়ক ও নৌপথ উন্নয়ন চুক্তি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেটা বলা হয়েছে, এরকম কোনো চুক্তি নেই। আছে একটা চুক্তি সেটা হলো- "এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অফ চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অফ গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া"। এটা বাতিল হয়নি', আরও বলেন তিনি।
'ফারাক্কা বাঁধ সংক্রান্ত প্রকল্পে বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতা প্রস্তাব' নামেও কোনো প্রকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প (মিরসরাই ও মোংলা) বাতিল হয়নি এখনো, বাতিলের প্রক্রিয়ায় চলছে।
আদানি সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আদানি পাওয়ারের সম্বন্ধে যেটা বলা হয়েছে, এটা মোটামুটি ঠিক আছে। কারণ,আদানি পাওয়ারের সাথে বিদ্যুৎ আমদানির যে চুক্তি আছে, এটার সাথে আলোচনা চলমান আছে। আপনারা সবাই জানেন, এটা তো অনেকবারই খবর হয়েছে। এটা পুনর্বিবেচনার জন্য আলোচনা চলছে। এটা চলমান, কোনো চুক্তি যে হয়ে গেছে বা বাতিল হয়েছে এরকম কোনো কিছু নেই। পুনর্বিবেচনা হচ্ছে আসলে।'
'পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সম্প্রসারণ চুক্তি' সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এরকম কোনো চুক্তি হয়নি। আপনারা জানেন যে একটা পাইপলাইন নুমালিগড় থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত আছে। এটা সম্প্রসারণের জন্য প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল একসময়। কিন্তু যে বলা হচ্ছে যে সম্প্রসারণ চুক্তি, এরকম কোনো চুক্তি নাই।'
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, কোনো প্রকল্প বাতিল বা পুনর্বিবেচনা করা হয় তখনই যখন দেখা যায় এটি দেশের জন্য লাভজনক নয় বা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যখন কোনো চুক্তি সই বা বাতিল হবে, তখন তা গণমাধ্যমে জানানো হবে।
