প্রবাসীদের ভোট গ্রহণে ৪০ কোটি টাকার প্রকল্পে অনুমোদন অর্থ মন্ত্রণালয়ের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট গ্রহণের জন্য নেওয়া প্রকল্পে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
'দেশের বাইরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন' শিরোনামে চলতি অর্থবছরে এক প্রকল্প গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। গত সেপ্টেম্বরে এ প্রকল্পের জন্য তহবিল চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তার পরিপ্রেক্ষিতে এই বরাদ্দ দিল অর্থ মন্ত্রণালয়।
গত ১২ অক্টোবর অর্থ বরাদ্দ দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
কর্মকর্তারা বলেন, সেপ্টেম্বরের শুরুতে তহবিল চাওয়া হলেও ওই মাসের শেষের দিকে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) আসন্ন নির্বাচনে ভোটাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের এই অনুমোদন আসে।
নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পরীক্ষামূলকভাবে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যে প্রবাসী ভোট কার্যক্রম শুরু কর হবে।
প্রথম ধাপে দূতাবাসভিত্তিক বুথে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। ভোটাররা আগেই অনলাইনে নিবন্ধন করবেন, এরপর নির্ধারিত দিনে পাসপোর্ট ও এনআইডি যাচাই করে ভোট দিতে পারবেন।
কমিশনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ইস্যু করা হয়েছে। তবে কতজন কার্ডধারী বর্তমানে বিদেশে বা কোন দেশে বাস করছেন, তার কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই।
কমিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের নির্বাচনে ভোটদানের বিষয়টি দীর্ঘ প্রত্যাশিত হলেও তাদেরকে ভোটের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে একমাত্র পদ্ধতি তথা পোস্টাল ব্যালট ভোটিং অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। কারণ প্রাপ্ত সময়ের মধ্যে এই পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ প্রায় অসম্ভব। ফলে পর্যন্ত দেশের বাইরে থেকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার কোন নজির খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটদানের বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন দুটি পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে—তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা সূচক পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা ও অনলাইন ইন্টারনেট ভোটিং ব্যবস্থা। নির্বাচন কমিশন পর্যালোচনা করে এই দুটি পদ্ধতির পাশাপাশি প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতিকেও আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করে।
বিদেশে এনআইডি সেবা সম্প্রসারণ
১৪ অক্টোবর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনে অগ্রগতি জানিয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত ১১টি দেশে এনআইডি সেবা চালু হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে আরও ৮টি দেশে সেবা চালুর প্রস্তুতি চলছে।
তিনি জানান, প্রবাসীদের জন্য নিবন্ধন অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যা অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চালু করা হবে। 'নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। শিগগিরই মিয়ামি ও লস অ্যাঞ্জেলেসেও চালু হবে,' বলেন তিনি।
ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালদ্বীপ ও জর্ডানে কারিগরি দল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স ও স্পেনেও এই উদ্যোগের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি নির্বাচন ভবনে 'আউট অব কান্ট্রি ভোটিং' বিষয়ে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে অনলাইনে মত বিনিময় সভায় করেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
তখন সানাউল্লাহ বলেন, 'এবার প্রবাসীদের ভোটপ্রতি সরকার ৭০০ টাকা ব্যয় করবে। পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধন ও ভোট দেওয়ার হার কম। ব্যয়বহুল হলেও যৌক্তিক বিবেচনায় পোস্টাল ভোটিং করা হচ্ছে; আর প্রত্যাশাকেও সীমিত রাখতে হবে।'
তবে প্রবাসিদের কোনো ফি দিতে হবে না বলে জানান তিনি।
পোস্টাল ব্যালটের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'প্রবাসীদের পোস্টাল ভোটিয়ে নিবন্ধনের হার মাত্র ২.৭ শতাংশ। তাদের মধ্যে ভোট দেওয়ার প্রবণতা ৩০ শতাংশের নিচে। ভারতে সবশেষ চার কোটি প্রবাসীর মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার নিবন্ধন করেছেন; আর নির্বাচনে মাত্র ২ হাজার ৯০০ জন ভোট দিয়েছেন।'
প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী
অনলাইন আলোচনা চলাকালে কমিশনার সানাউল্লাহ প্রবাসীদের নিবন্ধন ও ভোটদানে সক্ষম করে তোলার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, পোস্টাল ব্যালটের বৈশ্বিক অপচয় বা নষ্টের হার ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি চারটা পোস্টাল ব্যালটের একটা দেশে এসে পৌঁছায় না।
'এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ভোটার যখন রেজিস্ট্রেশন করেন, যে ঠিকানাটা দেন, সেই ঠিকানায় ডাকটা পৌঁছায় না। আবার অনেকে আছেন, ডাক পৌঁছায়, কিন্তু আর সময়মতো ভোটটা দিয়ে পোস্ট করেন না। সময়মতো ফেরত না আসার কারণে এটা গণনার মধ্যে নেওয়া সম্ভব হয় না,' বলেন তিনি।
তিনি বাংলাদেশের জন্য দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেন—ব্যালটের গোপনীয়তা রক্ষা করা এবং সময়মতো ভোট ফেরত আসা নিশ্চিত করা। 'ভোটারদের কাছ থেকেও এক ধরনের ঘোষণা নেওয়া হবে যে, তিনি কাকে ভোট দিয়েছেন তা তিনি প্রচার করবেন না।'
সানাউল্লাহ বলেন, দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি দেখা দেয় যখন বিদেশে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর প্রার্থীর তালিকা পরিবর্তিত হয়। 'যদি কোনো আসনে শেষ মুহূর্তে আদালতের আদেশে প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে সেই আসনে বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা সকল ভোট বাদ পড়ে যাবে,' বলেন তিনি।
আগামী রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের জন্য ডিসেম্বরে তফসিল দেওয়ার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।