কর্মকর্তাদের সেনা হেফাজতে থাকার বিষয়টি গণমাধ্যমে দেখলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে না ট্রাইব্যুনাল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যথা সময়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, ১৫ জন কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে আছেন- এটা তিনি গণমাধ্যমে দেখলেও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে না ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া তিনি জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যেসব কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে, তা তাদের কাছে পৌঁছানোর কথা জানতে পেরেছেন তিনি।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের বিরতিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।
সাংবাদিকরা গুম ও খুনের মামলায় সেনা হেফাজতে নেওয়া কর্মকর্তাদের বর্তমান স্ট্যাটাস জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, এ ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে কোনো কথা হলে তিনি বলতে পারবেন। এর বাইরে কোনো বিষয়ে কথা বলার সঠিক কর্তৃপক্ষ তিনি নন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ একটি বিশেষ আইন। এটি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ডিসিপ্লিন ফোর্স ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিচারের জন্য প্রণীত। এই আইনে যে অপরাধগুলোর বিচার হচ্ছে, সেগুলোর বর্ণনা বাংলাদেশের সাধারণ কোনো আইনে নেই। ইভেন আর্মি অ্যাক্ট, নেভি অ্যাক্ট বা এয়ার ফোর্স অ্যাক্টেও নেই। এটা একটা বিশেষ আইন। এ অপরাধাগুলো আন্তর্জাতিক আইনে বর্ণিত অপরাধ। এর বিচার করার একমাত্র এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের।'
তিনি আরও বলেন, 'এ ট্রাইব্যুনালের এ আইনটি বাংলাদেশের সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। সংবিধানের ৪৭(৩) এবং ৪৭(ক) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা আছে- আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ বা গণহত্যার বিচারসংক্রান্ত কোনো আইন যদি সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণও হয়, তবুও সেটি প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ সংবিধান নিজেই ১৯৭৩ সালের ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টকে সংবিধানের চেয়েও শক্তিশালী মর্যাদা দিয়েছে।'
এর আগে, একই মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণ দেয় যে, যারা বিচারকাজ করেন, তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
দিনের শুরুতে প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের প্রসঙ্গ তোলেন। তখন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার বলেন, 'যারা বিচার করেন, তাদের অ্যাকাউন্টেবিলিটির ব্যবস্থা থাকা দরকার- জুডিশিয়াল অ্যাকাউন্টেবিলিটি কাউন্সিল।'
পরে মধ্যাহ্ন বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাজুল ইসলাম বলেন, 'সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মামলার রায়ে ওপেন কোর্টে তিনি একটি রায় দিয়েছিলেন, পরে পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা পরিবর্তন করেন। এ প্রসঙ্গটি আজ ট্রাইব্যুনালে উত্থাপন করলে ট্রাইব্যুনালের মাননীয় চেয়ারম্যান ওই মন্তব্য করেন।'