সুন্দরবনে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে বন বিভাগের উদ্যোগ

বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনের প্রাণ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সমুদ্র থেকে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করেছে বন বিভাগ।
ভেসে আসা এসব প্লাস্টিক বর্জ্য শুধু বনাঞ্চলের সৌন্দর্যই নষ্ট করছে না, ক্ষতি করছে মানবদেহসহ বনের প্রাণী ও পরিবেশের ভারসাম্যেরও।
বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখার এই উদ্যোগে স্থানীয় জনগণ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং পর্যটকদের সহযোগিতা অপরিহার্য।
সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এই বিশাল জীববৈচিত্র্যের বনকে দূষণমুক্ত রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'পূর্ব বিভাগে যোগদানের পর যখন বনের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে যাই, তখন দেখতে পাই সমুদ্র তীরবর্তী বনসংলগ্ন এলাকাগুলোয় প্রচুর প্লাস্টিক বর্জ্য জমে আছে।'
তিনি বলেন, 'এরপর থেকেই আমরা সুন্দরবনকে প্লাস্টিক মুক্ত রাখার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে কাজ শুরু করি।'
তিনি জানান, প্রতি মাসের প্রথম তিন দিনের যেকোনো একদিন আমাদের কর্মীরা (বনরক্ষীরা) বনের বিভিন্ন এলাকায় প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণের কাজ করবে। প্রয়োজনে শ্রমিক নিয়ে বর্জ্য অপসারণের কাজ করার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে সুন্দরবনের ডিমের চর ও কচিখালী বিচ এলাকায় বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রেজাউল করিম বলেন, 'সংগ্রহ করা এসব বর্জ্য খুলনায় নিয়ে রিসাইকেল করার ব্যবস্থা করা হবে। এতে একদিকে বন পরিচ্ছন্ন থাকবে, অন্যদিকে পরিবেশও কিছুটা সুরক্ষিত থাকবে।'
আমাদের এ কার্যক্রম নিয়মিত ও অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করা বেসরকারি সংস্থা 'সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন'-এর চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, 'প্লাস্টিক বর্জ্য মানবদেহের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি এটি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকেও মারাত্মক ক্ষতি করছে। সমুদ্র ও সুন্দরবনের মাছের শরীরে এই বর্জ্য প্রবেশ করলে এবং সেই মাছ যদি মানুষ খায়, তাহলে বড় ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।'
তিনি বলেন, 'সামুদ্রিক জাহাজগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ফেলার কারণে তা সমুদ্রের পানিতে ভেসে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করছে। এতে মাছসহ সকল জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সমুদ্রগামী এসব জাহাজের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। পাশাপাশি পর্যটকবাহী নৌযানগুলোতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে '
তাহলেই সুন্দরবনকে অনেকটা প্লাস্টিকমুক্ত হবে বলে আশা করেন এই গবেষক।