শাপলা প্রতীক চেয়ে ইসিকে আবারও চিঠি দিল এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের শাপলা প্রতীক বরাদ্দের দাবিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের প্রতি অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেছে। দলটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে শাপলা, সাদা শাপলা কিংবা লাল শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এনসিপির অনুকূলে এই তিন প্রতীকের যেকোনো একটি বরাদ্দ দিতে হবে।
মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠিটি ই-মেইলে ইসির সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছে দলটি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইসির দেওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপি ইসির সিনিয়র সচিব বরাবর একটি চিঠি দেয়। এতে শাপলা প্রতীকের বিষয়ে এনসিপি তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
ইসির চিঠির জবাবে এনসিপি বলেছে, গণমানুষের সঙ্গে শাপলা প্রতীক কেন্দ্রীক গভীর সংযোগ স্থাপিত হয়েছে এবং এটি ব্যতীত ইসির দেওয়া তালিকা থেকে অন্য কোনো প্রতীক পছন্দ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ঘটনারক্রম ও এনসিপির অভিযোগ
এনসিপি তাদের চিঠিতে একাধিকবার নির্বাচন কমিশনের সাথে প্রতীক নিয়ে হওয়া আলোচনার ধারাবাহিকতা তুলে ধরেছে:
প্রতীক তালিকাভুক্তি উদ্যোগ: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসি নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯(১) এ নতুন করে প্রতীক তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়। এনসিপি দাবি করেছে, সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্তির চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করেছিল এবং গত ৪ জুন ইসির একজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে এনসিপিকে আশ্বস্ত করা হয় যে, চূড়ান্ত তালিকায় শাপলা প্রতীক রয়েছে।
গত ২২ জুন এনসিপি নিবন্ধনের জন্য আবেদন দাখিল করে এবং শাপলা প্রতীক সংরক্ষণের আবেদন জানায়। পরবর্তীতে ৩ আগস্ট এনসিপি প্রতীক সংরক্ষণের ক্রম হিসেবে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা এবং ৩. লাল শাপলা পছন্দ করে চিঠি পাঠায়।
এনসিপি অভিযোগ করেছে, তাদের ৩ আগস্ট ও ২৪ সেপ্টেম্বরের দরখাস্তের বিষয়ে কমিশন এ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়েই (অর্থাৎ দরখাস্ত দুটি অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে) ৩০ সেপ্টেম্বরের সূত্রোক্ত চিঠি প্রেরণ করেছে, যা বিধিসম্মত হয়নি।
চিঠিতে এনসিপি জানায়, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীসহ দেশের ১০১ জন বিজ্ঞ আইনজীবী শাপলাকে প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিতে কোনো আইনি বাধা নেই বলে বিবৃতি দিয়েছেন। এমনকি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন, 'শাপলা প্রতীক এনসিপিকে না দেওয়াটা খুব বেশি আইনর জটিলতা বলে আমি মনে করি না। এটা দেওয়া যেতেই পারে।'
এছাড়া নাগরিক ঐক্যের সভাপতি জনাব মাহমুদুর রহমান মান্নাও এনসিপির অনুকূলে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে তার দলের ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
এনসিপি মনে করে, শাপলাকে প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করা এবং এনসিপিকে বরাদ্দ না দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কোনো আইনি ভিত্তি দ্বারা গঠিত নয়, বরং এনসিপির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। তাদের মতে, ইসি প্রতীক ইস্যুতে অন্যায্য আচরণ করছে, যা স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসির গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
নির্বাচনী কার্যক্রমে বঞ্চনার অভিযোগ
চিঠিতে এনসিপি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব করা এবং শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দিয়ে 'অনাকাঙ্ক্ষিত, আইন বহির্ভুত, বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী আচরণ' করার অভিযোগ এনেছে। এনসিপি মনে করে, এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন অসৎ উদ্দেশে এনসিপিকে নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত করছে, যা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে ইসির সদিচ্ছাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
সবশেষে বলা হয়, সার্বিক বিবেচনায় এনসিপি আশা করে, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধি ৯(১) সংশোধনক্রমে এনসিপির অনুকূলে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা, এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে।