জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা এখন পাবেন সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অনুদান ও স্বল্পসুদের ঋণ

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত বিশেষ কর্মসূচি 'দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন' নীতিমালা সংশোধন করে এ কর্মসূচির আওতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, আহত ব্যক্তিরা এককালীন ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা পাবেন। পাশাপাশি কম সুদের ৫০ হাজার টাকার ক্ষুদ্রঋণও নিতে পারবেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সহায়তার জন্য এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আন্দোলন বা অন্য কোনো ঘটনায় কেউ আহত হলে তারাও এ সুবিধার আওতায় আসবেন।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সহিংসতার ধরন বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে এ সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়।
দগ্ধ, আহত ও প্রতিবন্ধী হয়ে স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, আর্থিক সহায়তা, কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া লক্ষ্যে এ নীতিমালা নেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে নিবন্ধিত চিকিৎসক দ্বারা ভুক্তভোগীর আঘাত নিরূপণ করা হবে এবং সমাজকর্মীরা তা যাচাই করবেন। তবে যারা ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতা পান, তারা কেবল পুনর্বাসনের যোগ্য হলে সুদমুক্ত ঋণ পাবেন; এককালীন সুবিধা পাবেন না।
এই কর্মসূচি সারাদেশে বাস্তবায়ন হবে। দগ্ধ, আহত ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সুবিধা পেতে যেকোনো সময় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় বা হাসপাতালে আবেদন করতে পারবেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতা হারানো ব্যক্তিকে। এছাড়া বয়োজ্যেষ্ঠ, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, দরিদ্র, ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তি, একাধিক নির্ভরশীল পরিবারের কর্তা এবং নারী আবেদনকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
আহতদের সুবিধা ও শ্রেণিবিন্যাস
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ১২ হাজার জনকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে সরকার। আহতদের ক, খ, গ ক্যাটাগরিতে বিভাজন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করেছে। এদের জন্য চিকিৎসা খরচ ও মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
নতুন নীতিমালায় আহত বলতে বোঝানো হয়েছে—ব্যক্তিগত স্বার্থ ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংঘাত, সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনায় শারীরিক বা মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত এবং ট্রমায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে।
অনুদান বিতরণ
আবেদনকারীর পরিবারের বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকার কম হলে তিনি এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হবেন। অর্থাৎ মাসিক আয় ১৬,৬৬৬ টাকা বা তার কম হলে অনুদান পাওয়া যাবে।
শারীরিক ও মানসিক আঘাতের মাত্রা এবং আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় ন্যূনতম ১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে—এক হাতে আঘাত পেলে ১ লাখ টাকা, দুই হাতে আঘাত পেলে ২ লাখ টাকা; এক পায়ে আঘাত পেলে ১ লাখ টাকা এবং দুই পায়ে আঘাত পেলে ২ লাখ টাকা; চোখে আঘাত পেয়ে দৃষ্টিশক্তি হারালে ২ লাখ টাকা; কানে আঘাত পেয়ে শ্রবণশক্তি হারালে ২ লাখ টাকা; মাথায় বাহ্যিক আঘাত পেলে ১ লাখ, মাথার ভেতরে আঘাত পেলে ২ লাখ টাকা; অন্যান্য অঙ্গে আঘাত বা মানসিক ভারসাম্য হারালে ১ লাখ টাকা; কোনো অঙ্গহানি হয়ে স্থায়ীভাবে কর্মক্ষমতা হারালে ৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে।
একজন ব্যক্তি একাধিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার জন্য আলাদাভাবে সহায়তা নির্ধারণ করা হবে। তবে সর্বমোট সহায়তার পরিমাণ ৫ লাখ টাকার বেশি হবে না।
সূত্র জানায়, ২০০২ সালে দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার 'এসিডদগ্ধ ও প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কার্যক্রম' নামে নীতিমালা প্রণয়ন করে। ২০০২-০৩ অর্থবছর থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। তখন মূলত এসিডদগ্ধদের এ সুবিধা দেওয়া হতো। পরে ২০১০ সালে নীতিমালাটি দ্বিতীয়বার সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০১৫ সালে।
২০১৫ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, দগ্ধ ব্যক্তিকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ ন্যূনতম ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হতো। এছাড়া দগ্ধ ব্যক্তি চাইলে ক্ষুদ্রঋণের আবেদন করতে পারতেন, যার পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিবছর বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় এবং বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় এ অনুদান ও ঋণ কর্মসূচি পরিচালিত হয়ে আসছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কর্মসূচির জন্য ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "জুলাই আন্দোলনে আহত গেজেটভুক্ত সবাই এ নীতিমালার আওতায় সুবিধা চাইলে বর্তমান বাজেটে তা মেটানো সম্ভব হবে না। তাই বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।"