মরহুম স্বামীর সম্পত্তি জয়-পুতুলকে দান করেন হাসিনা, এরপরেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্লট বরাদ্দ নেন: আদালতে সাক্ষীরা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বামী মরহুম ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সম্পত্তির অংশ বুঝে নিয়ে পরে তা সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে হেবা (দান) করেন। তবে ঢাকায় এই সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও নিজেদের নামে কোনো সম্পত্তি নেই উল্লেখ করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাজউক থেকে প্লট বরাদ্দ নেয় তার পরিবার।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলায় জবানবন্দিতে এসব কথা জানান সাক্ষীরা।
আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে পঞ্চম দিনে আসামিদের বিরুদ্ধে আরও ৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছে। তবে এই মামলায় আসামিরা পলাতক থাকায় সাক্ষীদের জেরা করতে পারবেন না। আদালত পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৫ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদক প্রসিকিউটর খান মো. মঈনুল হাসান (লিপন)।
আজকের সাক্ষীরা হলেন, প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে মটর ক্লিনার মোহাম্মদ উজ্জ্বল হোসেন, গাজীপুরের কালীগঞ্জের সাব রেজিস্টার জাহিদুর রহমান, গাজীপুর সদর রেকর্ডরুমের সাব রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান, ঢাকার সাবেক মেট্রোপলিটনের ম্যাজিস্ট্রেট এম মেজবাহউর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক তৈয়বা রহিম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মুদ্রাক্ষরিক কামরুন্নাহার, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার অপারেটর মুক্তি তরফদার।
এর আগে, গত ৩১ জুলাই এসব মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। অভিযোগ গঠন শুনানির সময়ে আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পৃথক তিন মামলায় শেখ রেহানা, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ ১৭ জন; আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, শেখ হাসিনাসহ ১৮ এবং রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত ২০ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ ও ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ আদালতে তিনটি করে মোট ছয়টি মামলা বিচারের জন্য পাঠানো হয়। মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ৬ মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ আরও অনেককে আসামি করা হয়।
সম্প্রতি সবগুলো মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।