রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় ২৬৩ শতাংশ বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার: কোস্ট ফাউন্ডেশন

বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখ ৫৬ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সহায়তা কমলেও সরকার নজিরবিহীনভাবে ২৬৩ শতাংশ বরাদ্দ বাড়িয়েছে। এ তথ্য উঠে এসেছে কোস্ট ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে 'সাশ্রয়ী রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার জন্য চাই স্থানীয় এনজিওদের নেতৃত্ব' শীর্ষক আলোচনায় এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দাতাদের সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। যুক্তরাষ্ট্র ৭২ শতাংশ ও যুক্তরাজ্য ৪৮ শতাংশ সহায়তা কমিয়েছে। তবুও যুক্তরাষ্ট্র ৮৫ দশমিক ২৮ মিলিয়ন ডলার (২৪ শতাংশ) দিয়ে শীর্ষ দাতা হিসেবে রয়েছে। ইউরোপীয় কমিশন দিয়েছে ৬৬ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলার (১৯ শতাংশ)।
তবে ২০২৫ সালের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র ৩৮ শতাংশ পূরণ হয়েছে, যা সংকটের অষ্টম বছরে বড় আর্থিক চাপ তৈরি করছে। অর্থ বণ্টনেও বৈষম্য রয়েছে—আন্তর্জাতিক এনজিও পেয়েছে ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ, জাতীয় এনজিও ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ, আর স্থানীয় এনজিওর অংশ মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ আন্তর্জাতিক সংস্থার ৭০ শতাংশ ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাতে চলে যায়, যেখানে স্থানীয় এনজিওগুলো অনেক কম খরচে কাজ করতে পারে।

গবেষকদের মতে, বর্তমান তহবিল কাঠামোয় বড় পরিবর্তন দরকার। তাদের সুপারিশ হলো—কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ফান্ড সরাসরি স্থানীয় এনজিওকে দেওয়া, কক্সবাজার থেকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিস সরিয়ে খরচ কমানো এবং রোহিঙ্গাদের জীবিকা উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা অধীনের সমন্বয়ক নিখিল ভদ্র বলেন, "কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ জীবন-জীবিকায় সংকটে, আর রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক তহবিলের ওপর নির্ভরশীল। দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গাদের থাকার কারণে ফান্ড সীমিত, এবং বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণও কম। তাই সহায়তা স্থানীয় এনজিওর মাধ্যমে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা জরুরি, যাতে সাহায্য সঠিকভাবে পৌঁছায় এবং স্থানীয় জনগণও উপকৃত হয়।"
তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, সরকার জাতিসংঘ ও দাতা দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন এবং সহায়তার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করবে।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল উদ্দিন বলেন, "২০১৭ সালে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। আজ ফান্ড সংকটের মধ্যে পুরো দায়ভার বাংলাদেশ কেন বহন করবে? এটি আন্তর্জাতিক দায়িত্ব; দাতা দেশ ও জাতিসংঘকে সমানভাবে প্রত্যাবাসন ও খরচের দায়িত্ব নিতে হবে।"
সংস্থাটির পরিচালক মুস্তফা কামাল আখন্দ বলেন, "বড় দেশগুলো এ সংকটে ভূমিকা নিচ্ছে না; সব দায় এখন বাংলাদেশের কাঁধে। আমরা সাত বছর ধরে বলছি—মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন জরুরি।"
তিনি আরও বলেন, "প্রত্যাবাসন না হলে স্থানীয় মানুষ ও রোহিঙ্গাদের সহাবস্থান, পরিবেশ, শ্রম ও শিক্ষা—সবই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে কাজ সরাসরি বাস্তবায়ন করতে হবে এবং স্থানীয়দের ক্ষমতায়ন বাড়াতে হবে। আমরা চাই বাংলাদেশ আত্মমর্যাদাশীল ও শান্তিপূর্ণ জাতি হিসেবে এগিয়ে যাক।"