বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, চক্রের মূল হোতা রিমান্ডে
মোটা অঙ্কের বেতনের লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে জাল ভিসা ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার প্রতারক চক্রের মূলহোতা জোসনা খাতুন ওরফে জোসনা সুলতানাকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালত এই রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মীর মো. মনিরুল ইসলাম আসামিকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামি সরাসরি এই মামলার ঘটনার সাথে জড়িত। বিদেশে লোক পাঠানো ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে লোক নিয়োগের লোভ দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আসামির ঢাকায় কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই; বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে প্রতারণা করে পালিয়ে বেড়ায়। সে ভাসমান অবস্থায় চলাফেরা করে এবং একাধিক ঠিকানায় তার কার্যক্রম পাওয়া যাচ্ছে। তাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের বর্তমান অবস্থান জানা এবং তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হতে পারে। এজন্য আসামির পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। তবে আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
আদালতে বিচারক আসামিকে উদ্দেশ করে জানতে চান, তিনি কিছু বলতে চান কি না। তখন জোসনা বলেন, 'আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে আরেকটা কোম্পানির মাধ্যমে কাজ করাই। যার মাধ্যমে কাজ করেছি, সে আমার ৪৪ লাখ টাকা না দিয়ে পালিয়েছে। সেই জাল ভিসা দিয়েছে। আমি সাইফুলকে (বাদী) বলেছি কিছু সময় দিন, আমি টাকা পরিশোধ করব। কিন্তু উনি মামলা করে বসলেন।'
এরপর সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, 'এরা একটি বড় প্রতারক চক্র। দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করছে।' শুনানি শেষে আদালত জোসনার এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানার ইব্রাহিমপুর এলাকা থেকে সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করে। নড়াইল জেলার দলজিৎপুর গ্রামের বাসিন্দা জোসনা খাতুন ওরফে জোসনা সুলতানা।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিনি একটি প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ চক্র নিজেদের বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জেলার সাধারণ মানুষকে ইউরোপের যে কোনো দেশে বৈধ ভিসায় পাঠানোর প্রলোভন দেখাত।
অভিযোগে বলা হয়, ভিকটিম সাইফুল ইসলামের বাবার কাছ থেকে জোসনা ও তার সহযোগীরা ইতালি পাঠানোর নামে বিশ লাখ টাকা দাবি করে। প্ররোচনায় পড়ে বাদী রাজি হন এবং গত ৯ মার্চ তাদের অফিসে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও ২১ শত ইউরো জোসনাকে দেন। বাকি টাকা ইতালি পাঠানোর পর নেবে বলে মৌখিক অঙ্গীকার করা হয়। টাকা গ্রহণের গ্যারান্টি হিসেবে জোসনা তার নামে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের একটি ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর করে বাদীকে দেন।
টাকা নেওয়ার পর ভিকটিমকে ইতালির একটি ভিসার স্টিকার সরবরাহ করা হয়। পরে আসামিদের দেওয়া টিকিট নিয়ে গত ২২ এপ্রিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে ভিকটিম ইমিগ্রেশনে গেলে কর্তৃপক্ষ জানায় ভিসাটি জাল।
এরপর বাদী ও তার ছেলে আসামিদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা ফোন বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন পরে ফোনে যোগাযোগ করলে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরে তালবাহানা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত প্রতারণার শিকার পরিবার মামলা দায়ের করে।
