হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে হাতিরঝিল–পান্থকুঞ্জ এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ এলাকায় নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
পরিবেশবিদ ও আইনজীবীরা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা কোনো আনুষ্ঠানিক নোটিশ পায়নি। কিন্তু হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের খবর পাওয়ার পর গতকাল সকালে নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়েছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ হাতিরঝিল ও হোটেল সোনারগাঁও-সংলগ্ন পান্থকুঞ্জ পার্কের কিছু এলাকায় নির্মাণকাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দেন, পার্কটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এই রায় পরিবেশবাদীদের দাখিল করা একটি জনস্বার্থ রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে দেওয়া হয়।
১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আপাতত হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছে। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি মো. রেজাউল হক সরকারকে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ-টু-অ্যাপিল আবেদন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, যিনি আবেদনকারীদের পক্ষে আদালতে রিটের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, 'হাতিরঝিল–পান্থকুঞ্জ পার্কের অংশের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ বন্ধ রাখার হাইকোর্ট আদেশ না মানা মানেই আদালতকে অবমাননা করা। এর আগেও বিজিএমইএ ভবন ভাঙার সময় হাইকোর্ট হাতিরঝিলের জলাধারের মধ্যে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'পান্থকুঞ্জ পার্ক সুরক্ষার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এই এলাকাগুলো ধ্বংস করে একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা, যা ঘনবসতিপূর্ণ পলাশী এলাকায় নেমে আসে, টেকসই পরিকল্পনা নয়।'

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কাজ চলছে
দীর্ঘ বিরতির পর গত সপ্তাহে পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের কারণে থেমে থাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ আবার শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন একটি ক্রেন এনে পান্থকুঞ্জ পার্ক এলাকায় কাজ শুরু করে। ২০ সেপ্টেম্বর সকালে এই টিবিএস প্রতিবেদক সেখানে প্রায় ১৫ জন শ্রমিককে মাটি সরাতে ও নতুন কাঠামো নির্মাণের জন্য রড বাঁধতে দেখেন।
একজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে ২০ তারিখ সন্ধ্যায় বলেন, 'আমরা গত এক সপ্তাহ ধরে এখানে কাজ করছি। ক্রেন চলাচলের জন্য আমরা মাটির ওপর বড় বড় সিমেন্ট ব্লক বসিয়েছি। তবে দুপুরের পর কোম্পানি আমাদের আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে।'
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব জানান, হাইকোর্ট ১০ সেপ্টেম্বর দায়ের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে সব ধরনের নির্মাণকাজে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি চিঠি না পাওয়ার অজুহাত দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া হলো 'ভয়ঙ্কর মিথ্যা ও আদালত অবমাননা।'

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আক্তার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা এখনও কোনো কোর্টের অর্ডারের কপি পাইনি। এরপরও রবিবার সকালে বিষয়টি আমরা অবগত হওয়ার পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ওই অংশের কাজ বন্ধ থাকবে।'
পরিবেশগত উদ্বেগ
এই রিট আবেদনটি করেছেন নয়জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন—আনু মুহাম্মদ, গীতি আরা নাসরীন, আদিল মুহাম্মদ খান, সামিনা লুৎফা, লেখক ফিরোজ আহমেদ, গবেষক পাভেল পার্থ, আইনজীবী মাহবুবুল আলম তাহিন এবং বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান ও আমিরুল রাজীব।
তারা যুক্তি দিয়েছেন, প্রকল্পটি ইতোমধ্যেই হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্কের পরিবেশের ক্ষতি করেছে।
আবেদনকারীরা সতর্ক করেছেন, প্রকল্পটি চালিয়ে গেলে কাঠালবাগান, কাটাবন, নীলক্ষেত, পলাশী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এলাকায় যান চলাচল ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।
২০ সেপ্টেম্বর তাঁরা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক এবং সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠান, যেখানে আদালতের আদেশ মানার আহ্বান জানানো হয়েছে।