জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি দল বারবার বাধা সৃষ্টি করছে: গোলাম পরোয়ার

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের একমাত্র পথ হিসেবে আবারও পিআর পদ্ধতির দাবি তুলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটক থেকে দলটির বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা করা হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, 'দেশের রাজনীতিতে যে স্বচ্ছ নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা, সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত। রাজপথে ও কমিশনে—দুই ক্ষেত্রেই কাজ করছে। কিন্তু একটি দল বারবার বাধা সৃষ্টি করছে জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে।'
তিনি বলেন, 'তারা বলছে, এখন কী দরকার—নির্বাচনের পর করা যাবে। অথচ তাদের কারণেই এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গড়ে ওঠেনি। আমরা বলেছি, নির্বাচনের আগেই সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে দেশ এক মহাদুর্যোগে পতিত হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'যারা এখনই বলে নির্বাচনের পর সব আইন ও সংস্কার মুছে দেবে, জনগণকে তাদের ভোটের মাধ্যমেই বিচার করতে হবে। এই সংস্কার যদি নির্বাচনের আগেই না হয় এবং বিদ্যমান কাঠামোয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান হবেই।'
মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, 'জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি না থাকায় এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হচ্ছে না।'
তিনি বলেন, 'অনেকে বলেন, আপনারা আলোচনার টেবিল ছেড়ে রাজপথে যাচ্ছেন কেন? এর কারণ হচ্ছে, আলোচনায় কোনো ফল আসছে না। আমাদের আন্দোলন জনগণের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরার জন্য।'
তিনি আরও বলেন, 'জনগণ যদি গণভোটে পিআর না মানে, আমরা মেনে নেব। কিন্তু আপনারা গণভোটকে ভয় পাচ্ছেন কেন?'

সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, 'জামায়াতে ইসলামী বারবার বলেছে, অর্থবহ সংস্কার করতে হলে এর আইনি ভিত্তি প্রয়োজন। সেই ভিত্তির ওপরেই আগামীর নির্বাচন হতে হবে। আর এই নির্বাচনকে সুন্দর করতে হলে পিআর পদ্ধতি দরকার।'
তিনি বলেন, 'তাহলেই হবে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। প্রশাসনও সুন্দরভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে—ডাকসু, জাকসুর মতো।'
জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে, জনগণ তাদের প্রতিরোধ করবে। সরকারের ভেতরে যারা ড. ইউনূসকে কুপরামর্শ দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করা হবে। নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'সামান্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের ভোট গণনা করতে ৪০ ঘণ্টা লেগেছে। এভাবে ডাকসু-জাকসুর মতো যদি জয় হতে থাকে, তাহলে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হবে।'
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, পিআর পদ্ধতির প্রবর্তন এবং সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবিতে সাতটি ইসলামী রাজনৈতিক দল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে পৃথক বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দাবি, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে হলে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে এবং জুলাই সনদ অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
এর আগে জোহরের নামাজ শেষে একই স্থানের উত্তর ফটকে সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তাদের কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরপরই জামায়াতের সমাবেশ শুরু হয়।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিসসহ আরও কয়েকটি ইসলামী দলও বৃহস্পতিবার রাজধানীতে পৃথক বিক্ষোভ ও শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে।
সবগুলো দল 'জুলাই সনদ' বাস্তবায়ন, পিআর পদ্ধতি চালু, এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবিতে এসব কর্মসূচি পালন করেছে।