জাকসু নির্বাচনে অব্যবস্থাপনায় শিক্ষকের মৃত্যু, দায় প্রশাসনের: রিটার্নিং কর্মকর্তা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভোট গণনায় প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও জাহানারা ইমাম হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়জুন্নেসা সুলতানা আক্তার।
আজ শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'সহকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যু কেবল একজন শিক্ষকের নয়, এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরম অব্যবস্থাপনার পরিণতি।'
তিনি অভিযোগ করেন, 'নির্বাচনের আগে জানানো হয়েছিল ভোট গণনা হবে ইলেকট্রনিক মেশিনের মাধ্যমে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলে ভোটের দিন রাতেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনার ঘোষণা আসে। এতে একদিকে যেমন ভোট গণনায় ব্যাপক দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা অসহনীয় চাপের মুখে পড়েন।'
অধ্যাপক ফয়জুন্নেসা বলেন, 'সারাদিন অমানুষিক পরিশ্রম করার পর জান্নাতুল ফেরদৌসকে জানানো হয়েছিল পুনরায় সিনেট ভবনে গিয়ে গণনায় অংশ নিতে হবে। স্ট্রেস নিয়েই তিনি ঘুমাতে যান, আর সেই ঘুমই ছিল তাঁর শেষ ঘুম।'
তিনি আরও জানান, প্রীতিলতা হলের পোলিং অফিসার জানিয়েছেন, উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় জান্নাতুল ফেরদৌসকে তাড়াহুড়ো করে তিনতলা পর্যন্ত উঠতে হয়। তখন দরজার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে তিনি পড়ে যান এবং এরপর আর তিনি জীবিত ছিলেন না।
ফয়জুন্নেসা প্রশ্ন তোলেন, যদি আগে থেকেই ম্যানুয়াল গণনার সিদ্ধান্ত থাকত, তবে সেটি হলে করা হলো না কেন? হলে গণনা হলে রাত ১০টার মধ্যেই ফলাফল হয়ে যেত এবং এ মৃত্যু এড়ানো যেত।
তিনি বলেন, 'এটি শুধু অব্যবস্থাপনা নয়, চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। এই ঘটনার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে এবং সহকর্মীর পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।'
এছাড়া চারুকলা বিভাগের রিটার্নিং অফিসার কাজী মোহাম্মদ মহসিনসহ আরও অনেক শিক্ষক শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও জানান তিনি।
ভবিষ্যতে এমন অব্যবস্থাপনা এড়াতে নির্বাচন পরিচালনার পদ্ধতি ঢেলে সাজানোর দাবি জানান ফয়জুন্নেসা। তিনি জাকসুর মতো বৃহৎ নির্বাচনে ম্যানুয়াল গণনাকে অকার্যকর ও অমানবিক আখ্যা দিয়ে বলেন, '৮ হাজার ভোটারের ক্ষেত্রে ২৪ হাজার ব্যালট গণনা করতে হয়, যা তিন দিনেও শেষ করা সম্ভব নয়।'
শেষে তিনি বলেন, 'আমি এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। আমরা কান্না করছি, আমরা ক্ষুব্ধ। আমার সহকর্মীর মৃত্যু প্রশাসনিক ব্যর্থতার ফল। এর বিচার চাই।'