জাকসু নির্বাচনে অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিলের প্রতিবাদে অবরুদ্ধ উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা বাতিলের প্রতিবাদে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকে। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন জাকসু নির্বাচনের 'সম্প্রীতি ঐক্য প্যানেল'-এর প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামানসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা আলোচনায় বসলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
পরে ভোররাতে উপাচার্য আশ্বাস দিলে ও সকালে সিদ্ধান্ত জানাবেন বললে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরে যান।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, "শিক্ষার্থীরা যেটা বলছে (অবরুদ্ধ), সেটাই হয়েছে। এত রাতে কেউ এমনি এমনি বসে থাকে না।"
সম্প্রীতি ঐক্য প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি অমর্ত্য রায় জন। তবে তিনি নিয়মিত শিক্ষার্থী না হওয়ায় প্রাথমিকভাবে তাকে নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা থেকে বাদ দেয় নির্বাচন কমিশন। অমর্ত্য এরপর হাইকোর্টে রিট করলে আদালত তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায় আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। এ পরিস্থিতিতে রাতেই উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করতে যান সম্প্রীতি ঐক্য প্যানেলের নেতাকর্মীরা।
এসময় বিক্ষোভকারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আইনজীবী আপিল শুনানিতে দাবি করেন যে ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে গেছে এবং নতুন ব্যালট ছাপানোর সময় নেই—এই যুক্তিতে আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মতে, এটি 'কারিগরি অজুহাত', এবং প্রশাসন চাইলে নতুন ব্যালট ছাপিয়ে অমর্ত্যকে ফের প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।
এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সামনেই অমর্ত্যর আইনজীবীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। উপাচার্য জানান, কেবল একপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে থাকা আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলা দরকার। তখন শিক্ষার্থীরা তাকে ১৫ মিনিট সময় দেন এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ অবস্থা বজায় থাকবে বলে জানিয়ে দেন।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, "আমরা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, কল, মেসেজ—সবকিছু করেছি, কিন্তু কোনোভাবেই তাকে পাইনি। তবে বিষয়টা যদি শুধু ব্যালট পেপার ইস্যু হয়, তাহলে তা বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।"
ঘটনার সময় সাংবাদিকরা সিনেট ভবনে ঢুকে প্রশাসনের বক্তব্য নিতে চাইলে শুরুতে তাদের বাধা দেওয়া হয়। রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মেহেদি মামুন সিনেট হলে প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। পরে রাত ৪টার দিকে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় এবং তারা প্রশাসনের বক্তব্য নেওয়ার সুযোগ পান।