লাঠি-রামদা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে হামলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুকে, হেলমেট–মুখোশধারীরা কারা?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার একের পর এক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এসব ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয়রা লাঠি–রামদা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। কিছু ভিডিওতে আবার হেলমেট ও মুখোশ পরিহিত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের সংঘর্ষে অংশ নিতে দেখা গেছে। তারা কারা, কেন তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন এ প্রশ্ন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন রহস্য।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, ফুলহাতা জার্সি পরা এক শিক্ষার্থীকে ধানখেতে চারজন ব্যক্তি ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করছেন। দুজনের হাতে লাঠি, বাকিদের হাতে ধারালো অস্ত্র। জীবন বাঁচাতে শিক্ষার্থী কাকুতি–মিনতি করলেও তাকে নির্মমভাবে পেটানো হয়। শেষ পর্যন্ত দৌড়ে প্রাণে রক্ষা পান তিনি।
আরেক ভিডিওতে সাদা শার্ট পরা এক শিক্ষার্থীকে লাথি মেরে ভবনের ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। এরপরও তাকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। অন্য একটি ভিডিওতে মাটিতে পড়ে থাকা এক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে দেখা যায়।
অন্য এক ভিডিওতে একজন শিক্ষার্থীকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটাতে দেখা গেছে। এতে তার মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। যদিও তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জোবরা গ্রামের গৃহবধূ লামিয়া ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, 'রোববার সকালে দুজন শিক্ষার্থী আমাদের বাসায় বাথরুমে ঢুকে পড়েছিল। তাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে আমাদের ঘর ঘেরাও করে ভাঙচুর করা হয়েছে।'
হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু কাওসার মোহাম্মদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি এবং কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্টের ঘটনায় দুটি মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের লোক ইতোমধ্যে হাটহাজারী থানায় মামলা করতে গেছেন।'
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় জারি করা ১৪৪ ধারার মেয়াদ আরও একদিন বাড়িয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত করা হয়েছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিনের দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে রোববার দুপুর ২টা থেকে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ ছিল।
এই সময়ে ওই এলাকায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র, সব ধরনের দেশীয় অস্ত্র বহনসহ পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান ও চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকায় ভাড়া বাসায় দেরিতে ঢোকায় দারোয়ান এক ছাত্রীকে চড় মারেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার গভীর রাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অর্ধশতাধিক। রবিবার সকালে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। তখন উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আহত হন। দেশীর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। প্রশাসন বলছে, ৪০০ থেকে ৫০০ জন আহত হয়েছেন।
গত শনি ও রোববার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ ৮ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট কক্ষে উপাচার্য, দুই উপ-উপাচার্য, ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্যদের নিয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ ৮ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।