সাংবাদিক পরিচয় পেয়েও পুলিশ গুলি করেছিল; ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী মোহিদ

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সাংবাদিক পরিচয় পেয়েও পুলিশ গুলি করে বলে জানিয়েছেন সিলেটের স্থানীয় দৈনিক 'একাত্তরের কথা'র আলোকচিত্র সাংবাদিক মোহিদ হোসেন।
সাক্ষীর জবানবন্দিতে তিনি বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ গুলি চালিয়েছে পুলিশ।'
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি এসব কথা বলেছেন।
তার সামনে পুলিশের গুলিতে স্থানীয় এক সাংবাদিক নিহত হওয়ার নির্মম ঘটনা তুলে ধরে, ট্রাইব্যুনালের কাছে শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিক মোহিদ হোসেন।
সাক্ষ্যে মোহিদ বলেন, '২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার দেশব্যপী বিএনপির গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি ছিল। তার অংশ হিসেবে সিলেটের মধুবন পয়েন্টের কাছে কালেক্টরেট জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মোহিদ সেখানে সংবাদ সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলেন।'
তিনি বলেন, '১৯ জুলাইয়ের আগে আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছে, তাদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাজা শেষে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি জিন্দাবাজারের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ পেছন দিক থেকে অতর্কিতে গুলি বর্ষণ করে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি এবং আমার সহকর্মী সাংবাদিক আবু তোরাব পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলাম। পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছিল। আমি হাত উঁচিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বলছিলাম, 'দস্তগীর ভাই (এডিসি) আমরা সাংবাদিক, আমাদেরকে গুলি কইরেন না। তারপরও পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে।'
মোহিদ বলেন, 'পুলিশের গুলিতে আমার সহকর্মী দৈনিক জালালাবাদ এবং দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আবু তোরাব গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে বসে পড়েন। তাকে আমি রিকশায় করে এবং পরবর্তীতে সিএনজিতে করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন চিকিৎসায় বাধা দেওয়ায় তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ওইদিনই সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে সে মারা যায়।'
পুলিশের এডিসি সাদিক কাউসার দন্তগীর, কোতোয়ালী থানার এসি মিজানুর রহমান, কোতোয়ালী থানার ওসি মহিউদ্দিনসহ আরও অনেকে গুলি বর্ষণ করে বলেন সাক্ষী মোহিদ বলেন।
তিনি জানান, তিনি ওই ঘটনার একটি ভিডিও সংগ্রহ করেছেন এবং একটি ভিডিও নিজে করেছেন। দুইটা ভিডিও একটি পেনড্রাইভে ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। এর মধ্যে তার সহকর্মীর করা ভিডিওটি ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভ মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি বর্ষণ করছিল। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রক্তাক্ত আবু তোরাব প্রথমে মাটিতে বসে পড়েন, পরে নিজেই একটি রিকশায় ওঠেন এবং মোহিদ (সাক্ষী) রিকশাটি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।
মোহিদ বলেন, 'গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক আবু তোরাবকে প্রথমে তিনি রিকশায় করে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। পরে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।'
তিনি বলেন, 'আল-জাজিরা ও বিবিসির তথ্যচিত্রের মাধ্যমে জানতে পারেন যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তীতে আরও জানতে পারেন এ ঘটনার জন্য আরও দায়ী তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের প্রধান, স্বরাষ্ট্রসচিবসহ অনেকেই।'
আজ দুপুরের আগে সিলেটের আরেক সাংবাদিক হুমায়ুন কবির লিটনও একই সাক্ষ্য দেন।
এদিন আরও সাক্ষ্য দেন ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ হাসানাৎ আল মতিন।
হাসানাৎ আল মতিন ১৯ জুলাই তাদের হাসপাতালে শামসুল ইসলাম নামের একজন গুলিবিদ্ধ রোগীকে অস্ত্রোপচার করে একটি বুলেট বের করার কথা জানান।
পরে আইসিইউতে ওই গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি মারা যান বলেও তিনি জানান।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ 'শেষ পর্যায়ে' বলে জানিয়েছেন কৌঁসুলি মো. মিজানুল ইসলাম।
তিনি দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, 'মোটামুটি কমবেশি ৪০ জনের মতো সাক্ষী রয়েছেন।'