জাকসু: ১০ ছাত্রী হলে ১৫০ পদের মধ্যে মাত্র ২৪টিতে নির্বাচন, শূন্য থাকছে ৬০ পদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ছাত্রী হল সংসদের ১৫০ পদের মধ্যে নির্বাচন হবে মাত্র ২৪টিতে। প্রার্থী না থাকায় পদ শূন্য থাকছে ৬০টি। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন ৬৬ জন। এরমধ্যে বেগম সুফিয়া কামাল হল ও নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না।
এছাড়া, হল সংসদের গঠনতন্ত্র অনুসারে কোরাম পূর্ণ হচ্ছে না ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে। এমনকি ৫টি ছাত্রী হলের ভিপি পদেও প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে যাচ্ছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
হল সংসদের গঠনতন্ত্রের ৯(বি) ধারায় বলা হয়েছে, কার্যনির্বাহী কমিটির কোরাম ৭ সদস্যের হতে হবে। তবে মুলতবি সভার জন্য কোনো কোরামের প্রয়োজন হবে না।
জাহানারা ইমাম হলে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় দেখা গেছে, শুধু ভিপি, জিএস ও এজিএস এই তিন পদে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। তবে ৪টি পদ শূন্য এবং ৮টি পদে শুধু একজন করে প্রার্থী।
১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ভিপি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী জয়ী হচ্ছেন। তবে জিএস, এজিএস ও সমাজসেবা সম্পাদক এই ৩ পদে ভোট হবে। এছাড়া ৫টি পদ শূন্য থাকছে। একইসাথে ভিপিসহ ৭টি পদে একজন করে প্রার্থী থাকায় ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না।
বেগম খালেদা জিয়া হলে শুধু ভিপি ও জিএস এই ২ পদে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। বাকি ৭টি পদ শূন্য এবং ৬টি পদে একজন করে প্রার্থী আছেন।
১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ১২টি পদ শূন্য থাকায় কোরাম পূর্ণ হচ্ছে না। তবে ভিপি ও জিএস ২ পদে ভোট হবে এবং এজিএস পদে একজন প্রার্থী থাকায় ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না।
ফজিলাতুন্নেসা হলে জিএস, এজিএস ও সাহিত্য সম্পাদক এই ৩ পদে ভোট হবে। তবে ভিপিসহ ৯টি পদে একজন করে প্রার্থী থাকায় ভোটের প্রয়োজন নেই।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ৯টি পদ শূন্য থাকায় কোরাম পূর্ণ হচ্ছে না। পাশাপাশি ৬টি পদে একজন করে প্রার্থী থাকায় সেখানেও ভোট হচ্ছে না।
প্রীতিলতা হলে শুধুমাত্র জিএস পদে নির্বাচন হবে। এই হলে ৩টি পদ শূন্য এবং ১১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হচ্ছেন।
রোকেয়া হলে ভিপি, জিএসসহ ৫টি পদে ভোট হবে। তবে ৬টি পদ শূন্য এবং ৪টি পদে একজন করে প্রার্থী আছেন।
বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে ভিপি, জিএসসহ ৫টি পদে ভোট হবে। যদিও ৬টি পদ শূন্য এবং ৪টি পদে একজন করে প্রার্থী রয়েছেন।
বেগম সুফিয়া কামাল হলে ১০টি পদেই একজন করে প্রার্থী থাকায় কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। এছাড়া ৫টি পদ শূন্য রয়েছে।
ছাত্রীদের নির্বাচন বিমুখতা প্রসঙ্গে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মোস্তফা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মনোনয়ন ফর্ম বিক্রির সময় আমরা সাধারণ ছাত্রীদের অনেক উৎসাহিত করেছি। কিন্তু দলীয় রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণা ও অন্যান্য কারণে তারা তেমন আগ্রহী হয়নি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হল, এর দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। অথচ নানা চেষ্টা সত্ত্বেও ছাত্রীরা মনোনয়ন নেয়নি।"
১৩ নম্বর ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেক চৌধুরী বলেন, "গত ৩টি জাকসু নির্বাচনে আমি ভোটার ছিলাম। ৩৩ বছর আগে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছি, এবার তা দেখছি না। এর কারণ হতে পারে গত ১৫ বছরের রাজনৈতিক পরিবেশ। সে কারণেই শিক্ষার্থীরা রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। তবে এই নির্বাচন অব্যাহত থাকলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ ফিরে আসবে।"
কোরাম পূর্ণ না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, "কোরাম পূর্ণ হওয়ার জন্য ৭ জন প্রয়োজন। আমাদের হলে সেটি হচ্ছে না। এজন্য আমাদের গঠনতন্ত্র সংশোধনের দিকেও যেতে হতে পারে।"