ভোটকেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা নিয়ে আগামী মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি ও পরিবেশ সুষ্ঠু রাখাতে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম সভা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের ঘোষণা করা নির্বাচনি রোডম্যাপে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে ইসি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ কাজকে প্রাধান্য দিয়ে এ রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে ইসি।
রোডম্যাপে আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম বিষয়ে বলা হয়েছে, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ইসির সঙ্গে সিনিয়ার সচিব/সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, মহাপুলিশ পরিদর্শক এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সঙ্গে কেন্দ্রীয় আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠান এবং ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনি এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা গ্রহণ বিষয়ে মতবিনিময় ও প্রাক-প্রস্তুতিমূলক প্রথম সভা হবে।
আর তফসিল ঘোষণার ১৫দিন আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্বিতীয় সভা করবে ইসি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোথায়, কত সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে তার পরিকল্পনা, সমন্বয় ও দিকনির্দেশনা বিষয়ে এ সভা হবে।
নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে নির্বাচনি এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে নিয়োজিত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচনি দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ হবে।
৩১ অক্টোবর তফসিল ঘোষণার সার্বিক প্রস্তুতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখা, ঋণ খেলাপী সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, ভোটকেন্দ্র থেকে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিশেষ খামে ইসির ভোটগণনার বিবরণী পাঠানো, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ইত্যাদি কার্যক্রমের প্রস্তাবনা প্রস্তুতের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ ও প্রয়োজনে প্রথম সভা করবে ইসি।
আর তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন আগে এ বিষয়ে নিয়োগ পরিকল্পনা, সমন্বয় ও দিকনির্দেশনা বিষয়ে সভা করার পরিকল্পনা করেছে ইসি।
এছাড়া, তফসিল ঘোষণার ২০ দিন আগে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রস্তুত, হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ও প্রয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করবে ইসি।
এর আগে, গত ৭ আগস্ট ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'ফেব্রুয়ারিতে ভোটগ্রহণ করতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠি ইসি সচিবালয়ে পৌঁছেছে। আপনারা ধরেই নিতে পারেন, এই শিডিউল ঘোষণার কাজটা আমরা ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে করব।''
তফসিল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে ভোটগ্রহণ কবে হবে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, 'ভোট গ্রহণের ৬০ দিন আগে তফসিল দিব। আমাদেরকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলেছে আগামী রমজানের আগে ভোটগ্রহণ করার জন্য।'
সংবাদ সম্মেলনে বিরাজমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ রয়েছে কি না জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, 'কেন থাকবে না। এক্সিস্টিং ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশনটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আমাদের বিষয় হচ্ছে নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম।'
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বুঝে সমন্বয় করে বিষয়টি দেখা হবে বলেও জানান সচিব।
তিনি বলেন, 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে যখন, যেখানে, যতটুকু প্রয়োজন হবে; আমরা করব। আমরা ভবিষ্যতদ্রষ্টা নই। ভবিষ্যতে যেটা আসবে সেটা সামাল দেওয়ার জন্যে যা করার আমরা সব করব।'
সচিব বলেন, 'সিসি ক্যামেরা, বডি ক্যামেরার বিষয়টা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এটা আমাদের ব্যাপার না। এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা যদি আমাদের অংশগ্রহণের বিষয় হয়ে থাকে, সেটা কতটুকু হতে হবে তা আলোচনা সাপেক্ষে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এর উদ্যোগ নিতে হবে, ইসির নয়।'
তিনি জানান, 'ভোটকেন্দ্রে সিসি টিভি লাগবে কী লাগবে না এটা নির্ভর করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমানের ওপরে। আমরা চাইব শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হোক। ভোটার স্বতস্ফূর্তভাবে, আন্দমুখর পরিবেশে আসবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি মনে করে এটা [কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা] করতে হবে, অংশীজন হিসেবে আমরা তা অবশ্যই করব। আমরা সহযোগিতা করব।'