শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়: বুয়েট উপাচার্য

আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান।
তিনি বলেছেন, 'আজ বুয়েটসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিদাওয়া পেশ করতে যমুনার দিকে যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ তাদের ওপর নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, এই সভ্য সমাজে পুলিশের এই আচরণ কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না।'
আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে ব্লকেড তুলে নিতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানাতে এসে অধ্যাপক বোরহান এ কথা বলেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিচারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান তিনি।
উপাচার্য বলেন, 'আমাদের দাবি যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। আমার বেশ কিছু শিক্ষার্থী লাঠিচার্জে, টিআর শেলে, সাউন্ড গ্রেনেডে এবং রাবার বুলেটে আহত হয়েছে।'
এ সময় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থন আছে জানিয়ে তাদের ঘরে ফিরে যেতেও অনুরোধ করেন তিনি।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে ড. বোরহান বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো সমাধানে একটি কমিটি করে ব্যবস্থা নিন।
এদিকে আন্দোলনের জেরে আজ সন্ধ্যায় শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তবে নিজেদের পক্ষে ফলাফল না আসা পর্যন্ত সড়ক ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।
আজ সকাল ১১টার দিকে প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত 'লংমার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিন দফা দাবি আদায়ে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর দেড়টার দিকে তাদের যমুনা অভিমুখে পদযাত্রায় বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়, ইট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি
১. স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক হামলার জন্য আন্দোলনকারীদের সামনে এসে ক্ষমা চাইতে হবে এবং জবাবদিহি করতে হবে।
২. প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এর আগে গঠিত কমিটিকে আমরা আমাদের প্রতিনিধিত্বের অনুপযুক্ত মনে করি এবং প্রত্যাখ্যান করি। অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিসহ প্রকৌশল আন্দোলনের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে কমিটি সংস্কার করে পেশকৃত তিন দফা দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেনে নিয়ে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে এবং এ মর্মে সংশ্লিষ্ট তিন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে আজই এসে এর নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৩. হামলায় আহত সব শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারকে বহন করতে হবে এবং এই আন্দোলন চলাকালে সব শিক্ষার্থীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ দিয়ে এই যৌক্তিক আন্দোলনে আর কোনো হামলা করা যাবে না।
৪. রোকন ভাইয়ের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
৫. শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে হামলার জন্য ডিসি মাসুদকে বহিষ্কার করতে হবে।