সরকারের ভেতরের একটি মহল গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায় না: ফখরুল

সরকারের ভেতরের একটি মহল গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (২৭ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বর্ষীয়ান রাজনীতিক কাজী জাফর আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মহাসচিব বলেন, 'আমাদের অনেক বেশি সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেক বেশি কাজ করতে হবে। আমরা যদি মনে করি, আমরা জিতে গেছি, সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে, তাহলে বড় ভুল হবে। সরকারের ভেতরের একটি মহল অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করছে যে যারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, তারা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে। আজকে যখন দেখি, পত্রিকায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কর্মকর্তাকে, উপদেষ্টাকে আওয়ামী লীগের লোকজন হেনস্তা করছে, তখন কোথায় যাব আমরা? এটা আমাদের মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি করেছে।'
ফখরুল বলেন, 'কোনোদিন রাজনীতিতে হতাশ হইনি, সবসময় সবাইকে সাহস দিয়েছি। কিন্তু এখন মাঝে মাঝে হতাশার ছায়া দেখি। দেশের বেশিরভাগ মানুষই নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্নীতি, দুর্নীতি আর দুর্নীতি—কোনো অফিস-আদালতে যেতে পারবেন না। আগে যেখানে ঘুষ দিতে হতো এক লাখ, এখন দিতে হয় পাঁচ লাখ।'
'গণঅভ্যুত্থানের ফলে মানুষের মনমানসিকতায় যে পরিবর্তন আসার কথা ছিল, তা আসেনি। রাজনৈতিক নেতারাও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন, যা আরও বেশি ক্ষতি করছে। দেশকে বাঁচাতে সবার এগিয়ে আসা দরকার', যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি এসেছে। গণতন্ত্রে ফেরার জন্য নির্বাচনও ঘোষিত হয়েছে। আমরা সবাই মিলে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সংস্কারের ৩১ দফা দিয়েছি। বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে আমরা উপলব্ধি করেছি। তাই সংস্কার কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছি। কোথাও বাধা সৃষ্টি করিনি, বড় কোনো দাবি তুলে সরকারকে বিব্রত করিনি।'
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, 'আজ কিছু রাজনৈতিক দল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য নিত্য নতুন দাবি তুলছে। এমন দাবি তোলা হচ্ছে, যার সঙ্গে সাধারণ মানুষ পরিচিত নয়। সংখ্যানুপাতে বা পিআর পদ্ধতির মতো বিষয় সাধারণ মানুষ সহজে বুঝবে না। এগুলো বুঝতে সময় লাগবে, কিন্তু খুব কঠিন।'
তিনি বলেন, 'গণ-অভ্যুত্থানের কয়েকদিন পরেই আমরা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে বলেছিলাম। তখন অনেকে সমালোচনা করে বলেছিল— শুধু ক্ষমতায় যেতে চাই। কিন্তু আমরা জানতাম, যত দেরি হবে পরিবর্তনের সুযোগ তত দূরে চলে যাবে। এক-এগারোর সময় সেটাই হয়েছে। নির্বাচন না দিয়ে দুই বছর সময় নেওয়া হলো, পরে এক ফ্যাসিস্টের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হলো, যার ভোগান্তি ১৫-১৬ বছর ভুগতে হলো সবাইকে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা তো ঘরপোড়া গরু। আমরা দেখেছি, যখনই কোনো পরিবর্তন হয়, তখনই সেই সুযোগ অন্যরা নিয়ে নেয়। নির্বাচন আয়োজনে যত দেরি হয়, তত তারা সুবিধা পেয়ে যায়। এক-এগারোর সরকার দুই বছর থাকল এবং ফ্যাসিস্টের হাতে ক্ষমতা তুলে দিল। গত ১৫ বছর ধরে সেই ভোগান্তি আমাদের পোহাতে হয়েছে। তারা বাংলাদেশের অর্থনীতি শেষ করে দিয়েছে। রাজনৈতিক কাঠামো শেষ করেছে। মানুষের মন-মানসিকতা সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে।'