‘জামায়াত অন্ধকারের কালো শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র করছে’: ফজলুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে 'কালো শক্তি' বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদ্য সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে 'বিতর্কিত' বক্তব্য দেওয়ার জেরে গত রোববার (২৪ আগস্ট) দলের পক্ষ দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের (শোকজ) জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নোটিশের লিখিত জবাব জমা দেন।
জবাবে তিনি বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, আমি নাকি জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কথা বলেছি। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, এটি সত্য নয়। আমি ইসলাম ধর্ম এবং আল্লাহ-রাসুলে বিশ্বাসী। তবে রাজনৈতিকভাবে ধর্মের ব্যবসায়ীদের (যেমন, জামায়াতে ইসলামী) বিরুদ্ধে অতীতেও বলেছি, ভবিষ্যতেও বলব।'
নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, 'অভিযোগ করা হয়েছে, আমি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছি। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি, এই অভিযোগ আমি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছি। আমি কোনোদিন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেইনি। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাইদকে পুলিশ সরাসরি গুলি করে হত্যার পর আমিই প্রথম বলেছিলাম, তিনি একুশ শতকের প্রথম 'বীরশ্রেষ্ঠ'। আমার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমি সবসময় জুলাই-আগস্ট শহীদদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছি।'
আরও পড়ুন: বিতর্কিত মন্তব্য করায় বিএনপির ফজলুর রহমানকে শোকজ
শোকজের জবাবে ১১টি পয়েন্ট উল্লেখ করেন ফজলুর রহমান। একটি পয়েন্টে তিনি জামায়াত-শিবিরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ''মানুষ এখন বুঝতে শুরু করেছে জুলাই আন্দোলনের দুটি রূপ ছিল। প্রথমত; বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বে 'গণ-আন্দোলন', যার লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করা। এর প্রধান স্লোগান ছিল 'এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি'। কিন্তু আমি যাদের অন্ধকারের 'কালো শক্তি' বলেছি, তারা হলো জামায়াত-শিবির, যারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণ-আন্দোলনের ফসলকে কুক্ষিগত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র এবং শক্তি সৃষ্টি করছে। জাতীয় নির্বাচন তাদের কাছে গৌণ ব্যাপার।''
আরও পড়ুন: 'জবাব সন্তোষজনক নয়': তিন মাসের জন্য ফজলুর রহমানের দলীয় পদ স্থগিত করল বিএনপি
অন্য একটি পয়েন্টে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) জামায়াত-শিবিরের সহযোগী উল্লেখ করে ফজলুর রহমান বলেন, জামায়াত-শিবির ও এনসিপি একসাথে বলতে শুরু করল- ১৯৪৭ হলো প্রথম স্বাধীনতা এবং ২০২৪ হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা। আর ১৯৭১ হলো ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া (সূত্র: বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা)। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মনে হলো এসব অশ্রাব্য ও মিথ্যা তথ্য শোনার আগে আমার মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল। তাই জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের সত্য কথাগুলো বলতে শুরু করলাম এবং জামায়াত-শিবিরকে 'কালো শক্তি' চিহ্নিত করে এনসিপিকে তাদের সহযোগী বলতে শুরু করলাম। তারাই এখন দেশের সব প্রশাসন, অর্থ এবং বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেছে।
এদিকে জবাব 'সন্তোষজনক' না হওয়ায় আগামী তিন মাসের জন্য ফজলুর রহমানের সব ধরনের পদ স্বগিত করেছে বিএনপি। একইসঙ্গে তাকে এখন থেকে টকশো বা সামাজিক মাধ্যমে কথা বলার সময় দেশের মর্যাদা ও দলের নীতিমালা যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, সে বিষয়ে সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছে দলটি।