কাপাসিয়ায় জুলাই আন্দোলনে হামলার মামলা প্রত্যাহার চাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট সরকারবিরোধী বিক্ষোভে হামলার ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জেলা কমিটি থেকে এসংক্রান্ত সুপারিশ ব্যতিত মন্ত্রণালয়ের চিঠির কপি কাপাসিয়ায় পৌঁছালে মামলার বাদী ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য নিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখার সহকারী সচিব মো. মফিজুল ইসলামের গত ১৫ জুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে, গাজীপুর জেলার বিভিন্ন থানার রাজনৈতিকভাবে দায়েরকৃত ১১৯টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৪৯৪ ধারার আওতায় মামলা প্রত্যাহার বিষয়ে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে যে, সরকার ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৪৯৪ ধারার আওতায় গাজীপুর জেলার মামলাসমূহ প্রসিকিউশন না চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, "ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৪৯৪ ধারার আওতায় উক্ত মামলাগুলো প্রত্যাহার করার লক্ষ্যে গাজীপুর জেলা পাবলিক প্রসিকিউটরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।"
ওই চিঠির ১৬ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে কাপাসিয়া থানার মামলা নাম্বার ২৩। তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪। মামলার ধারা ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩২৬/৪৩৫/৪৩৬/৪২৭/১১৪ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩/৪ ধারা।
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কাপাসিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন, উপজেলার তরগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে জুনায়েদ হোসেন লিয়ন। তিনি কাপাসিয়া উপজেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সদস্য সচিব।
এই মামলায়, এক নম্বর হুকুমের আসামি করা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সীমিন হোসেন রিমিকে। মামলায় রিমির সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ-ছাত্রলীগের আরো ৬১ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখা একটি কমিটি গঠন করে।
কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদস্য পুলিশ সুপার/উপ পুলিশ কমিশনার, এবং পাবলিক প্রসিকিউটরকে সদস্য এবং অতিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে এ কমিটি যাচাই বাছাই করে মামলা প্রত্যাহারের জন্য তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কিন্তু এ কমিটি আলোচিত মামলাটি প্রত্যাহারের সুপারিশ পাঠায়নি বলে জানা গেছে।
কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন, "এটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলা। এটি প্রত্যাহারের কোনো সুপারিশ করা হয়নি। তারপরেও কীভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের তালিকায় মামলাটি এলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা এ ঘটনায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ।"
এবিষয়ে গাজীপুরের পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তফা কামাল বলেন, "বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলার কারণে মামলাটি দায়ের করা হয়। এটি ৫ আগস্টের পরের মামলা। আমরা জেলা থেকে এ মামলাটি প্রত্যাহারের সুপারিশ পাঠাইনি। একারণে এ মামলা প্রত্যাহারের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি ইতিমধ্যে আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জানানো হবে।"
মামলায় সিমিন হোসেন রিমি ছাড়াও আসামিদের মধ্যে রয়েছেন কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম সেলিম ও সাবেক সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আমানত হোসেন খান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমানসহ অন্যান্যরা।