জুলাই সনদের খসড়ায় মতামত: সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দেওয়ার প্রস্তাবে বিএনপির আপত্তি

সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো জাতীয় জুলাই সনদের খসড়ায় লিখিত মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দেওয়ার বিধান এবং সংখ্যানুপাতিক ভোট পদ্ধতি (পিআর সিস্টেম) বিষয়ে দলটি দ্বিমত জানিয়েছে।
একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় বসারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
গতকাল বুধবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় ই-মেইলের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এই মতামত জমা দেয় বিএনপি। যদিও এর আগে একটি সূত্র জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দলটি মতামত দেবে।
এর আগে ১৬ জুলাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়া পাঠানো হয়। যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা এবং দীর্ঘ বিচার-বিশ্লেষণের পর বিএনপি লিখিত মতামত জমা দিল।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খসড়া নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয় সোমবার ও মঙ্গলবার রাতে। বৈঠকে সদস্যরা 'নোট অব ডিসেন্ট'-এর প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সনদের ৮ দফা অঙ্গীকারনামাকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। তাদের যুক্তি, রাজনৈতিক দলগুলো যখন সনদে স্বাক্ষর করবে সেটিই হবে মূল অঙ্গীকার; আলাদা করে আরেকটি অঙ্গীকারনামার প্রয়োজন নেই। তবে রাখতে হলে সেটি যৌক্তিক পর্যায়ে থাকতে হবে।
অঙ্গীকারনামার চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, সনদের প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে এবং এর বৈধতা বা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
বিএনপি নেতাদের মতে, এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো দলিল সংবিধানের ওপরে হতে পারে না। কোনো নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা প্রশ্ন তুললে তার আইনি প্রতিকার পাওয়ার অধিকার থাকতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, "জুলাই সনদ সংবিধানের উপরে প্রাধান্য পেলে একটি খারাপ নজির স্থাপন হবে। এখানে বলা হয়েছে, সংবিধান বা অন্য কোনো আইনের সঙ্গে ভিন্নতা থাকলেও সনদের বিধান প্রাধান্য পাবে। এর মানে হচ্ছে, এটি সংবিধানের ওপরে। কোনো সমঝোতার দলিল কি 'সুপ্রা কনস্টিটিউশনাল ইনস্ট্রুমেন্ট' হতে পারে? এটা হতে পারে না।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা ভেবে দেখতে পারি কীভাবে এই দলিলটিকে সংবিধান ও আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে বাস্তবায়ন করা যায়। কিন্তু যদি বলা হয় দলিলটি সংবিধানের ওপরে থাকবে, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য খারাপ নজির তৈরি হবে। এটি করা ঠিক হবে না।"