ফ্যাসিবাদ যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দরকার: ডা. তাহের

ফ্যাসিবাদ যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেছেন, 'বিগত ৫৪ বছরে নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতার কারণেই ফ্যাসিবাদীরা ক্ষমতায় এসেছিল। জনগণের আন্দোলনের কারণে ফ্যাসিবাদী সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আর যাতে ফ্যাসিবাদ ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে কারণেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়া দরকার। আইনসভার দুই কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে।'
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আজ রোববার (১৭ আগস্ট) বিকাল ৩টায় রাজধানী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত 'জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও আমাদের করণীয়' শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
পিআর পদ্ধতির বিষয়ে ডা. তাহের আরও বলেন, 'দেশের শতকরা ৭১ ভাগ লোক পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। জনগণ জুলাই ঘোষণা ও সনদের আইনি ভিত্তি চায় এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন দিতে হবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে জুলাই সনদ ও ঘোষণাকে আইনি মর্যাদা দিতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসবে।'
তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আপনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করুন, গোলটেবিল বৈঠক করুন, তারপর দেখুন জনগণ কী চায়। জুলাই সনদ ও ঘোষণা রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমেই আইনি ভিত্তি প্রদান করা সম্ভব।'
এ সময় জনগণের দাবি আদায়ের জন্য ইসলামপন্থী ও গণতান্ত্রিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার আহ্বান জানান জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা।
যারা দ্রুত নির্বাচন চাইছেন, তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান না বলেও অভিযোগ করেন ডা. তাহের।
তিনি বলেন, 'জুলাই বিপ্লবের পরে জনগণ যাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল, তারাও আজ ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপস করছেন। দেশকে ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত করতে হলে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে হবে। যারা তড়িঘড়ি করে নির্বাচন চান, তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান না।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন, আগে সংস্কার ও বিচার, তারপর নির্বাচন। আমরাও তাই বলছি। কিন্তু সংস্কার, বিচার না করেই এবং জুলাই ঘোষণা ও সনদ বাস্তবায়ন না করেই যারা নির্বাচন চান, তারা মূলত ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চান।'
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, 'জুলাই ঘোষণা অসম্পূর্ণ। রাজনৈতিক দল এবং জনগণের দাবি অনুযায়ী জুলাই ঘোষণাকে পূর্ণাঙ্গতা দান করতে হবে এবং জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। জুলাই ঘোষণা ও সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া না হলে পরবর্তীতে যে সরকার আসবে, তারা তা মানবে না। ইতোমধ্যেই একটি দলের নেতা বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে সবকিছু মুছে ফেলবেন।'
পিআর পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'দেশের বেশিরভাগ দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। এ পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। যারা বলেন জনগণ পিআর বোঝে না, তারা সঠিক কথা বলছেন না। আমরা আইন সভার দুই কক্ষেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। আমরা সব ইসলামী ও গণতান্ত্রিক দল নিয়েই একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।'
তিনি বলেন, 'অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আগে মাঠ সমতল করতে হবে। তারপর নির্বাচন দিতে হবে। তা নাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।'
ডা. তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ শিশির মনির।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম।