‘হাসিনা সরকার আমাদের হত্যা মামলায় জড়িয়েছে’: ডা. নিতাই হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মিন্টু

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত (নিতাই) হত্যা মামলা এবং সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন বলে আদালতে দাবি করেছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাসুম মিন্টু ওরফে মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু।
রোববার (১৭ আগস্ট) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মো. রেজাউল করিমের আদালত রায় ঘোষণার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন মিন্টু।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নিতাইয়ের গাড়িচালক কামরুল হাসান অরুণ, মাসুম মিন্টু, সাইদ ব্যাপারী, বকুল মিয়া ও সাইদ মিজি। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আবুল কালাম, সাইদুল, ফয়সাল ও পেদা মাসুম।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন রফিকুল ইসলাম। এছাড়া, রফিকুল ইসলাম নামে আরেক আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন আদালত। দণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
এছাড়া, রায়ে রাতে ঘরে অনুপ্রবেশের দায়ে প্রত্যেককে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক মাস করে সশ্রম কারাভোগ করতে হবে। মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে চুরির দায়ে প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানা থেকে ১০ আসামিকে আদালতে উপস্থিত করেন পুলিশ। এরপর বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। রায়ে সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ, চার জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
রায় শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ১০ আসামি বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আমরা কোনো অপরাধ করিনি। ঘটনার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না স্যার (বিচারক)। আমরা নির্দোষ। আমাদের অনেকেরই স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। একটু দয়া করবেন স্যার।'
এ সময় বিচারক বলেন, 'রায় ঘোষণা হয়ে গেছে। এখন আর কিছুই করার নেই। দাঁড়িয়ে থাকা এক আসামি কান্না করতে করতে বলেন, 'আল্লাহর ওপর বিচার ছেড়ে দিলাম। আমি নির্দোষ।'
এ সময় সব আসামিকে কাঁদতে দেখা গেছে।
সাজা পরোয়ানা নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পথে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মিন্টু বলেন, 'শেখ হাসিনা সরকার আমাদের এই হত্যা মামলায় জড়িয়েছেন। সাগর-রুনির হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। আমার ভাইকে জিম্মি করে আমার কাছ থেকে টিপসই নিয়ে আমাকে ফাঁসিয়েছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার বাসা লালবাগে। আর ঘটনা হয়েছে বনানীতে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কাছে। ডিবি আমাদের ধরে পিটায়া-মিটায়া টিপসই নিছে। আমরা এই মামলা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমরা নির্দোষ।'
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্বাস উদ্দিন মাতুব্বর জানান, 'এই মামলার ১০ আসামিই দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিলেও কেউ নিজে ছুরি মারার কথা স্বীকার করেনি। আসামি মাসুম বলছেন, বকুল ছুরি মারছে। বকুল বলছে, মাসুম ছুরি মারছে।'
তিনি বলেন, 'এই মামলায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড, চারজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এ রায় যথাযথ ও সঠিক হয়নি। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশা করি, সেখানে ন্যায়বিচার পাব।'
অন্যদিকে, রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, 'আসামিরা ডা. নিতাইয়ের বাসায় চুরি করতে গিয়ে তাকে হত্যা করে। পরবর্তীতে চুরি যাওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। এই মামলায় সব আসামিরই সাজা হয়েছে। প্রত্যেকেই তাদের ভূমিকার কথা স্বীকার করেছেন। দীর্ঘদিন বিচারের পর এই মামলার রায় হয়েছে। আমরা রায়ে সন্তুষ্ট। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি।'
তিনি আরও বলেন, 'এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন সময়ে দেশের সব হাসপাতালে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। তৎকালীন সরকার এ ঘটনায় ন্যায় বিচারের আশা দিয়েছিল। বর্তমান সরকার আশার পর আমরা দায়িত্বের সঙ্গে এ মামলার নিষ্পত্তির ব্যাপারে কাজ করেছি। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ। যাদের সেবায় মানুষ সুস্থ হয়, আমরা বেঁচে থাকি। তাদেরই হত্যা করা হয়েছে।'