অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর '২০২৪ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস: বাংলাদেশ' বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাংলাদেশের স্বাধীন গণমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'যেসব সংবাদমাধ্যম পূর্ববর্তী সরকারের সমালোচনা করেছিল কিংবা বিরোধী দলের কার্যকলাপ এবং বিবৃতি প্রচার করেছিল, তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।'
এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও অনলাইন গণমাধ্যম সবসময়ই সক্রিয় ছিল ও বিভিন্ন ধরনের মতামত প্রকাশের চেষ্টা করতো। তবে সরকারের সমালোচনা করার কারণে অনেক গণমাধ্যমকেই চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'স্বাধীন গণমাধ্যম পূর্ববর্তী সরকারের আমলে স্বাধীনভাবে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারত না। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গণমাধ্যমের স্বাধীন মত প্রকাশের অবস্থার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। যদিও কিছু সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে পরোক্ষ চাপের অভিযোগ করেছেন।'
স্বাধীন সাংবাদিক এবং দেশীয় গণমাধ্যমের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী সরকারের আমলে গণমাধ্যমের ওপর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রভাব ছিল। তারা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞাপন বন্ধের পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানিকে তাদের বিজ্ঞাপন বন্ধের জন্য চাপ দিত যা গণমাধ্যমগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতো।
প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, সরকারের পরিবর্তনের পর পূর্ববর্তী সরকারের সমর্থক হিসেবে ধরা হত এমন সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয় ও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। এসবের মধ্যে এমন অভিযোগও ছিল যেগুলোর বাস্তব ভিত্তি খুব কম বলে মনে হয়েছিল, অথবা চাঁদাবাজির ঘটনা বলে মনে হয়েছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে অন্তত চারজন সিনিয়র সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনকে হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে সমর্থনমূলক হিসেবে দেখা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, 'অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে, মধ্যবর্তী সরকার পূর্ববর্তী সরকার বা শাসক দলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ১৬৭ জন সাংবাদিকের সনদ বাতিল করেছে। সনদ ছাড়া সাংবাদিকরা এখনও গণমাধ্যমে লিখতে ও প্রকাশ করতে পারতেন, তবে তারা সরকারি মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করতে পারতেন না, যার ফলে সচিবালয়ের ভেতরে, যেখানে অধিকাংশ মন্ত্রণালয় অবস্থিত, সরকারি অনুষ্ঠান বা সংবাদ সম্মেলন কভার করার ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছিল।"
প্রতিবেদন আরও জানায় যে, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং পূর্ববর্তী শাসক দলের ছাত্র সংযুক্তিসহ কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের হিংসা, হয়রানি এবং আতঙ্কিত করার লক্ষ্যবস্তু করেছিল, বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "পূর্ববর্তী সরকারের সময় বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার, পুরোনো মামলায় হেফাজতে রাখা, ব্যয়বহুল ফৌজদারি মামলা, জরিমানা ও কারাদণ্ড, এবং অপরাধমূলক রেকর্ড থাকার কারণে বিভিন্ন হয়রানির মুখে পড়তেন সংবাদকর্মীরা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দায়িত্ব নেওয়ার গত বছরের আগস্ট থেকে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।"