আশুলিয়ায় বকেয়া পাওনার দাবিতে কারখানার সামনে শ্রমিক অবস্থান, সরাল শিল্প পুলিশ

বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে ঢাকার আশুলিয়ায় বন্ধ কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন মাসকট গ্রুপের তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
এই তিন কারখানা হলো– মাসকট গার্মেন্টস লিমিটেড, মাসকট ফ্যাশনস লিমিটেড এবং মাসকট নিটস লিমিটেড। কারখানাগুলো একই কমপ্লেক্সের আওতায়।
আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির গেইটের সামনে অবস্থান নিয়ে শতাধিক শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরবর্তীতে দুপুরের দিকে শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলে শ্রমিকরা কারখানার সামনে থেকে সরে যান।
এর আগে একই দাবিতে গতকাল ১১ আগস্টও সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা কারখানাটির সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকরা।
মূলত গত জুনে কার্যাদেশ সংকটের কথা উল্লেখ করে লে-অফের আওতায়, শিল্প গ্রুপটির তিনটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলেও—কারখানাগুলোর যেসব শ্রমিকের চাকরির মেয়াদ এক বছর বা এরও বেশি, তাদের সার্ভিস বেনিফিটসহ অন্যান্য পাওনাদি এখনও পরিশোধ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা জানান, গত জুনে কোরবানির ঈদের পর এক নোটিশে ১৭ জুন থেকে কারখানা তিনটি একযোগে লে-অফ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ১৯ জুন আশুলিয়ায় শিল্প পুলিশ-১ এর কার্যালয়ে সব পক্ষের উপস্থিতিতে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে, ১০ জুলাই এবং ১০ আগস্ট দুই কিস্তিতে শ্রমিকদের যাবতীয় পাওনাদি পরিশোধের কথা ছিল।
তারা জানান, চুক্তি অনুসারে জুলাই মাসের ১০ তারিখে শ্রমিকদের পাওনার একটি অংশ পরিশোধ করা হলেও—চলতি আগস্ট মাসের ১০ তারিখে সার্ভিস বেনিফিটসহ বাকি যেসব পাওনা পরিশোধের কথা ছিল, সেটি মালিকপক্ষ পরিশোধ করেনি।
ফলস্বরূপ, গতকাল ১১ আগস্ট সকালে শ্রমিকরা কারখানাটির সামনে উপস্থিত হলে গেইটে নতুন আরেকটি চিঠি দেখতে পান, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে— কারখানা বিক্রি ছাড়া শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা মালিকপক্ষের পক্ষে অসম্ভব। কারখানা বিক্রির বিষয়ে দুটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে, বিক্রি সাপেক্ষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে মালিকপক্ষ।
শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের তারিখ পরিবর্তনে মাসকট গার্মেন্টস লিমিটেডের প্যাডে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক বরাবর – প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গত ৬ই আগস্ট পাঠানো একটি আবেদনের কপি টিবিএসের হাতে এসেছে।
সেই আবেদনে বলা হয়েছে, "মাসকট গ্রুপের প্রতিষ্ঠানসমূহের (মাসকট গার্মেন্টস্ লি., মাসকট ফ্যাশনস লি., মাসকট নিটস লি., ১৪৬ দেওয়ান ইদ্রিস রোড, জিরাবো, আশুলিয়া, ঢাকা) শ্রমিক, শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধি, শ্রম পরিদর্শক, বিজিএমইএর প্রতিনিধি এবং শিল্প পুলিশের সমন্বয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-০১, শ্রীপুর, ঢাকা-এর কনফারেন্স কক্ষে গত ১৯/০৬/২০২৫ ইং তারিখে শ্রম আইন ২০০৬-এর ১২৪ (ক) ধারা অনুযায়ী একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী ১০ জুলাই ও ১০ আগস্ট ২০২৫ ইং তারিখে দুইটি কিস্তিতে শ্রমিক-কর্মচারীদের সমস্ত পাওনাদি পরিশোধ করার কথা ছিল।"
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, "উল্লেখিত তারিখ অনুযায়ী প্রথম কিস্তির অর্থ ১০ জুলাই পরিশোধ করা হয়েছে। প্রথম কিস্তির অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে আমাদের অনেক ব্যক্তিগত ঋণ করতে হয়েছে, এবং সেজন্য আমরা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। এমতাবস্থায় দ্বিতীয় কিস্তির টাকা কোনোক্রমেই ফ্যাক্টরি বিক্রি না করে পরিশোধ করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, আমরা দুটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, এবং আশা করি অতি শীঘ্রই আমরা সফল হব। বিক্রয়লব্ধ টাকার প্রথম কিস্তি পাওয়া মাত্রই আমরা শ্রমিক-কর্মচারীদের বাকি পাওনাদি বুঝিয়ে দেব।"
মাসকট নিটস লিমিটেডের লিফট অপারেটর টিপু সুলতান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, "মালিকপক্ষ হঠাৎ করে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করায় এমনিতেও শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছে। নতুন করে মালিকপক্ষ যে আরও এক মাসের সময় চেয়েছে, সেটিও শ্রমিকদের জানানো হয়নি, এখন বলা হচ্ছে কারখানা বিক্রি সাপেক্ষে এই পাওনা পরিশোধ করা হবে। আমরা চাই অনতিবিলম্বে আমাদের পাওনা পরিশোধ করা হোক।"
স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আল কামরান টিবিএস'কে বলেন, "যেহেতু কারখানা বন্ধ, কাজেই মালিকপক্ষের উচিত ছিল, যথাসময়ে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা। এখন যেই নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সেটি অনিশ্চিত। কাজেই আমাদের দাবি, একটি সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণার মাধ্যমে শ্রমিকদের যাবতীয় বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হোক।"
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া টিবিএস'কে বলেন, কারখানা লে-অফের কারণে শ্রমিকদের যে সকল সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, সেসব সুবিধার মধ্যে কিছু গত মাসে পরিশোধ করা হয়েছে। ১০ আগস্ট বাকিটা পরিশোধ করার কথা বললেও—কারখানা কর্তৃপক্ষ সেটি পরিশোধ করতে পারেনি। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে আগামী মাসের ১০ তারিখে বকেয়া পরিশোধ করবেন। তবে সম্ভব হলে আগামী সোমবার তারা শ্রমিকদের একটি পেমেন্টের ব্যবস্থা করবেন।
তিনি আরও জানান, আজ সকালে কিছু শ্রমিক কারখানার সামনের মূল ফটকে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছে।