গাজীপুরের ‘বেলাই বিল’ রক্ষায় হাইকোর্টের রুল, ৩ মাসের স্থিতাবস্থা

গাজীপুর জেলার সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় চারশ' গ্রামজুড়ে বিস্তৃত প্রায় ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঐতিহ্যবাহী বেলাই বিল ভরাট কার্যক্রমের ওপর আগামী ৩ মাসের জন্য স্থিতাবস্থা আরোপ করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে দখল দূষণরোধে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা হবে না এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা একটি জনস্বার্থমূলক মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বেলার আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন জলাশয়ের মতো দখল ও দূষণে চরম সংকটে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিলটি। 'বিল' শ্রেণির এ জলাশয়কে এক ফসলী জমি দেখিয়ে নর্থ সাউথ গ্রুপ, তেপান্তর, মাহাদী গ্রুপ, বাংলা মার্ক লিমিটেড, আমার বসতি, ইন্টেলিজেন্ট কার্ড নামক আবাসন প্রকল্পগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই সাইনবোর্ড স্থাপনপূর্বক নির্বিচারে মাটি ভরাট করে চলেছে।
আদেশে নির্বিচারে দূষণ, দখল ও শ্রেণি পরিবর্তন থেকে ঐতিহ্যবাহী 'বেলাই বিল' রক্ষার ব্যর্থতা সংবিধান, প্রচলিত আইন ও বিচারিক সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন হওয়ায় কেন তা অননুমোদিত, অবৈধ এবং জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীদের ওপর রুল জারি করেছেন আদালত।
জারি করা এ রুলে বিলটি দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণ; নর্থসাউথ গ্রুপ, তেপান্তর, মাহাদী গ্রুপ, আমার বসতি, বাংলা মার্ক লি. এবং এ্যাকুয়া বিলাসসহ বিলে বিদ্যমান সব দখলদার উচ্ছেদের মাধ্যমে বিলটি পুনরুদ্ধার, সুরক্ষা ও সংরক্ষণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
একইসঙ্গে নির্বিচার দূষণ, অবৈধ ভরাট ও শ্রেণি পরিবর্তন করে বিলের ক্ষতি সাধন করায় দোষী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
রুল জারির পাশাপাশি আদালত এক অন্তর্বর্তী আদেশে নর্থসাউথ গ্রুপ, তেপান্তর, মাহাদী গ্রুপ, আমার বসতি, বাংলা মার্ক লি. এবং এ্যাকুয়া বিলাস নামক আবাসন প্রকল্প বেলাই বিলে ভরাট কার্যক্রমের ওপর আগামী ৩ মাসের জন্য স্থিতাবস্থা আরোপ করেছেন।
একইসঙ্গে রাজউকের চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তররের মহাপরিচালক এবং গাজীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক; গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, গাজীপুর সদর, শ্রীপুর, কাপাশিয়া এবং কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে আরএস জরিপ অনুযায়ী বেলাই বিলের সীমানা নির্ধারণ এবং বেলাই বিল পুনরুদ্ধারে সব দূষণ ও দখলকারীর তালিকা প্রস্তুতপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ উল্লেখ করে সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
সেইসঙ্গে আদালত বিলের আশেপাশে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে দেওয়া পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্তাবলী প্রতিপালন নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন।
পাশাপাশি বেলাই বিল ও বিল সংলগ্ন নিচু কৃষি জমির অবস্থা জানতে এবং বেআইনি ও বিধি বহির্ভূত ভরাট কার্যক্রমের ফলে বিলের যে ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করতে তদন্ত পরিচালনা করার এবং জলাশয় ও কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন প্রতিহত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতের উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ৩ মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
তিনি আরও জানান, একুতা ও মুলগাঁও অংশে 'প্রাণ কোম্পানি লি.'-এর সাইনবোর্ড রয়েছে। জয়দেবপুর থানায় 'এ অ্যান্ড এ ট্রাউজার লি.'- এবং বিলের মাঝখানে মাছের অভয়ারণ্য হিসাবে চিহ্নিত অংশে 'এ্যাকুয়া বিলাস রিসোর্ট'- ভরাটের পাশাপাশি বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বিলের পানিকে দূষিত করছে।
দূষিত পচাঁ পানিতে বেড়ে ওঠা কচুরীপানা বিলের পানি প্রবাহ হ্রাস করে মাছের উৎপাদন ব্যাহত করছে। প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে অনেকে বালু ও মাটি ফেলে বিল দখল করে চলেছে।
এসব কারণে বেলা জনস্বার্থ ও পরিবেশ রক্ষার্থে 'বেলাই বিল'- এর সীমানা নির্ধারণপূর্বক জলাশয়টি সংরক্ষণে উল্লেখিত জনস্বার্থমূলক মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীগণ হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ; গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক; গাজীপুর সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার; নর্থসাউথ গ্রুপ, তেপান্তর, মাহাদী গ্রুপ, আমার বসতি, বাংলা মার্ক লি. আবাসন প্রকল্প এবং এ্যকুয়া বিলাস রিসোর্টেও ব্যবপস্থাপনা পরিচালক।
আদালতে বেলা'র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. এস. হাসানুল বান্না, তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট তৌহিদুল আলম এবং রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খাঁন জিয়াউর রহমান।