হলে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ ছাত্রসংগঠনের বৈঠক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি থাকা না থাকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ক্যাম্পাসের প্রায় ২৩টি সক্রিয় ছাত্রসংগঠনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। এতে বিভিন্ন সংগঠন হলে রাজনীতি চালুর পক্ষে বা বিপক্ষে প্রস্তাব দেয়।
বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানান, গেস্টরুম, গণরুম ও অপ-রাজনীতির সংস্কৃতি বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি ঐতিহাসিক রূপরেখা প্রণয়ন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, 'হলে ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইন 'ইয়েস-নো' ভোটের মাধ্যমে মতামত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে একটি ফ্রেমওয়ার্ক নির্ধারণের সুপারিশও করা হয়েছে।'
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, 'আমরা হলে ও ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কাঠামো বা কার্যক্রম রাখতে দেব না এবং আমরা এটি চাই না।' শিক্ষার্থীদের 'গণরুম' ও 'গেস্টরুম'-এর যুগে ফেরত যেতে হবে না—এই সেন্টিমেন্টের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ক্যাম্পাস এলাকায় রাজনীতি না রাখার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।'
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন খালিদ জানান, বৈঠকে ক্যাম্পাস রাজনীতি, হল রাজনীতি ও ডাকসু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এত স্বল্প সময়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে বিভিন্ন সংগঠনের প্রস্তাব থেকে প্রশাসন কিছু ইনপুট নেবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, 'অতীতের গণরুম, জোরপূর্বক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে নেওয়া ইত্যাদি কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা ও ট্রমা রয়েছে। তাই ২৩টি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে হলে রাজনীতির রূপ কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আলোচনা চালিয়ে যেতে চাই।'
তিনি আসন্ন ডাকসু নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান এবং কোনো দমনমূলক ব্যবস্থায় ফেরত না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এদিকে, ইসলামী ছাত্রশিবিরকে আমন্ত্রণ জানানোয় বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ও জাসদ ছাত্রলীগ।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, '৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত পরিবেশ পরিষদের নীতির পরিপন্থীভাবে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী'র ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে প্রশাসন সহযোগিতা করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় আমরা প্রতিবাদ স্বরূপ সভা ত্যাগ করেছি।'
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা জানান, শিবিরকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন তারা। প্রাপ্ত ব্যাখ্যা ন্যাক্কারজনক হওয়ায় ও উপাচার্যের হলগুলোতে রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তারা সভা থেকে বেরিয়ে আসেন।