ঢাকায় ৮২ শহীদ পরিবার ও ১,৪৮৩ জুলাই যোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিল জেলা প্রশাসন

ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ঢাকা জেলার ৮২ শহীদ পরিবার ও ১ হাজার ৪৮৩ জন জুলাই যোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'দেশের মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল ফ্যাসিবাদী সরকার। বিগত ১৬ বছরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট শুধু একটা বিশেষ দিবস নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা, গণজাগরণের উপাখ্যান এবং ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন।'
তিনি আরও বলেন, 'আজ আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের; যাদের আত্মত্যাগের কারণে আমরা পেয়েছি স্বাধীন, স্বার্বভৌম বাংলাদেশ।'
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, সমাজকল্যাণ ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ বলেন, 'পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের যারা সহযোগী ছিল, তারা পালিয়ে যাওয়ায় প্রশাসনিক শূন্যতা দেখা দিয়েছিল। এটা মোকাবিলা করে নাগরিক সেবা গতিশীল করতে আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল। তা আমরা কাটিয়ে উঠেছি।'
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধারা স্মৃতিচারণা করেন।
পরে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ শহীদ পরিবার ও যোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শহীদ শুভ'র মা রেনু বলেন, '২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বিকেলে আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলেও কোনো চিকিৎসা করা হয়নি। পরদিন ভোরে আমার ছেলের মৃত্যু হয়। আমার ছেলেকে গোসল করাতেও বাধা দেওয়া হয়। ছেলে হত্যার বিচারের কিছুই পায়নি। ছাত্রদের ডাকে সাড়া দেওয়া কি আমার ছেলের অপরাধ ছিল? সন্তান হারানোর ব্যথা একজন মা ছাড়া কেউ বোঝে না।'
শহীদ আকরাম খান রাব্বির মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত মৃত। শুধু নিশ্বাসটা আছে। সন্তানহারা মা কিভাবে দুনিয়াতে বেঁচে থাকে, আল্লাহ জানে। আমরা এখানে আনন্দ করতে আসিনি। এসেছি আমাদের সন্তানের বিচার চাইতে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিচার চাই। তাকে ধরে এনে এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে পুরো পৃথিবী কেঁপে উঠে।