সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চিয়তা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে: টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, জুলাই মাসে যে সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছিল, সেগুলোর বাস্তবায়ন এখনো সংবিধান ও আইনের দিক থেকে অনিশ্চিত।
এই অনিশ্চয়তা কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে টিআইবি।
আজ সোমবার (৪ আগস্ট) রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে 'কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি' শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব মন্তব্য করে সংস্থাটি। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম ও মো. জুলকার নাঈন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নানা বিষয়ে মতভেদ থাকলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ছিল। কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন এখনও হয়নি, ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা আবারও দেখা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারের কিছু উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থার যে প্রত্যাশা ছিল, তা এখনো পূরণ হয়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ও সরকারের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট রোডম্যাপের অভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়ছে।
টিআইবির মতে, সরকারের অভ্যন্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমন্বয়ের অভাব ও অস্থিরতা স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদিও দলনিরপেক্ষ প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর নতুন প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ এবং বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ছাড়া কার্যকর কোনো সংস্কার সম্ভব নয়। এর পাশাপাশি, অভ্যুত্থানে যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যেও মতবিরোধ ও বিভক্তি তৈরি হয়েছে, যা সংস্কার প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।
প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক সংস্কার নিয়ে এখনো গভীর মতপার্থক্য রয়েছে।
তথ্য জানার অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথেও এখনো নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
টিআইবি আরও জানায়, গত এক বছরে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক প্রভাব চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। একই সঙ্গে নারীদের অধিকার এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর সহিংসতা ও জবরদস্তির ঘটনাও ঘটেছে, যা সমাজে বৈচিত্র্য ও বৈষম্যহীনতার মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।