জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মতো জঘন্য অপরাধ পাকিস্তানি হানাদাররাও করেনি: আইন উপদেষ্টা

জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মতো জঘন্য অপরাধ পাকিস্তানি হানাদাররাও করেনি বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, এই অপরাধের বিচার যারা করবে না, তারা আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে 'জুলাই গণহত্যার বিচার: আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 'জুলাই পুনর্জাগরণ' অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এই আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সভাপতির বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'গণহত্যার বিচারে কোনো অন্যায় বা গাফিলতি করিনি, বিচার নিয়ে আন্তরিকতায় কোনো কমতি নেই, আল্লাহ সাক্ষী।'
তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনা ও তার দোসররা বাংলাদেশে যে অপরাধ করেছে, আমি সরি [দুঃখিত], আমার মনে হয় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীও এত জঘন্য অপরাধ করেনি। মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা, আহত মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে।'
'আপনারা বলতে পারেন ২৫শে মার্চের কালো রাত্রি হয়েছে। অবশ্যই ২৫শে মার্চের কালো রাত্রিতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। ওটাতো অন্য দেশের বাহিনী। আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি তারপর। একাত্তর সালে ডেড বডি [মৃত দেহ] পুড়িয়েছে এমন ফুটেজ দেখি নাই। একজন আহতকে নিয়ে যাচ্ছে এক বন্ধু, সেখানে গুলি করা হয়েছে—এমন ঘটনা কোনো মুক্তিযোদ্ধার মুখে শুনি নাই', যোগ করেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা আরও বলেন, 'এত বড় গণহত্যার পরও ফ্যাসিস্টদের কোনো অনুশোচনা নেই, এখনো চক্রান্ত করে চলছে। এমন ভাবে অকাট্য সাক্ষ্য রেখে যাব, চাইলেই কোনো সরকার গণহত্যার বিচারে শৈথিল্য করতে পারবে না।'
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িত শীর্ষপর্যায়ের একটি বড় অংশের বিচার সম্পন্ন হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, 'মোবাইল কোর্ট ও গণহত্যার বিচার এক বিষয় নয়। তাই এই বিচার সময় নিয়ে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে কোনো সরকার বা আন্তর্জাতিক মহল এ বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে—সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই বিচার কাজ পরিচালিত হচ্ছে।'
তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ আগামী ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং নির্দেশদাতারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারল, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং এরও বিচার হওয়া উচিত।'
তিনি বলেন, 'অভিযুক্তদের অনুপস্থিতিতে বিচার হবে এবং ট্রাইব্যুনাল রায় দেবে, কিন্তু তাদের অনেকেই সত্যিকারের বিচারের মুখোমুখি হবেন না—এটা মেনে নেওয়া যায় না। ফলে রায় হলেও অনেক অপরাধী শাস্তির বাইরে থেকে যাবেন। বিচারপ্রক্রিয়ার এই দিকটি নিয়ে ভাবতে হবে।'
রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গ্রেপ্তার-বাণিজ্য ও মামলা-বাণিজ্য এখনো চলমান। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত হবে ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে কাজ করা।'
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের। আলোচনা শেষে জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদদের এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতদের স্মরণে দোয়া করা হয়।
এছাড়া অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে 'ট্রায়াল অব জুলাই কার্নেজ' শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।