ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত

উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত পাইলট ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজের এক পোস্টে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সেনাবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান ও সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (পরিচালন) মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। এছাড়াও ফিউনারেল প্যারেডে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোঃ তৌকির ইসলাম এর পরিবারের সদস্য, সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পদবীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ফিউনারেল প্যারেড শেষে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোঃ তৌকির ইসলাম -কে রাজশাহী জেলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।

বিমান বাহিনী জানায়, গতকাল ২১ জুলাই সোমবার ঢাকার বীর উত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি। এসময় বিমানের পাইলট তৌকির ইসলাম দূর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাবার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয়নি এবং দূর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধস্ত হয়।

এই আকস্মিক দূর্ঘটনায় আহত সকলকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারসহ এ্যাম্বুলেন্স এর সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পর উক্ত বিমানের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোঃ তৌকির ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ২৭ বছর। মৃত্যুকালে তিনি বাবা-মা ও স্ত্রী এবং অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান।

বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। সম্মানিত বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবাররের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম, ৯ নভেম্বর ১৯৯৭ সালে রাজশাহী জেলার বোয়লিয়া থানাধীন সপুরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. তহুরুল ইসলাম এবং মাতার নাম মোছা. সালেহা খাতুন। তিনি ২০১৪ সালে পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি, ২০১৬ সালে একই কলেজ থেকে এইচএসসিতে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে বিএসসি (এ্যারোনটিক্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।

তৌকির ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন, এবং ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। তার মোট কমিশন চাকুরীকাল ৫ বছর ৭ মাস ২১ দিন। তিনি চাকুরীকালীন সময়ে বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ফ্লাইং স্কোয়াড্রন যেমন: ১৫ স্কোয়াড্রন-এ স্কোয়াড্রন পাইলট এবং ৩৫ স্কোয়াড্রন-এ স্কোয়াড্রন পাইলট ও এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চাকুরিকালীন সময়ে তৌকির ইসলাম দেশে-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১১ স্কোয়াড্রন থেকে বেসিক ফ্লাইং ট্রেনিং, ১৫ স্কোয়াড্রন থেকে বেসিক জেট এন্ড ফাইটার কনভার্সন কোর্স, এ্যারো মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ফিজিওলজিক্যাল ট্রেনিং অফিসার কোর্স ও ফিজিওলজিক্যাল ইনডকট্রিনেশন কোর্স, স্কুল অব সিকিউরিটি এন্ড ইন্টেলিজেন্স থেকে অফিসার্স বেসিক এয়ার ইন্টেলিজেন্স কোর্স, ৩৫ স্কোয়াড্রন থেকে অপস কনভার্সন কোর্স, বগুড়া র্যাডার ইউনিট থেকে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার কোর্স, স্কুল অব ফিজিক্যাল ফিটনেস থেকে ওয়াটারম্যানশীপ কোর্স ও বিমান বাহিনী একাডেমি থেকে পটেনশিয়াল ফ্লাইট কমান্ডার কোর্স কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন।
এছাড়াও তিনি ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন এ্যারোস্পেস মেডিসিন (ফাইটার) কোর্স সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন।