অবৈধ হোটেল শনাক্তে অভিযান শুরু করেছে পর্যটন মন্ত্রণালয়

হাইলাইটস:
- পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারাদেশে অর্নিবন্ধিত হোটেলের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু
- অনেক হোটেল মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই মিথ্যা স্টার রেটিং দাবি করছে
- পর্যটন মৌসুমে উচ্চ ভাড়া ও খারাপ সেবায় বিরক্ত পর্যটকরা
- অবৈধ হোটেল পরিচালনার কারণে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে
- হোটেল চালাতে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ও মন্ত্রণালয়ের এনওসি বাধ্যতামূলক
- সিগনেটের সঙ্গে অংশীদারত্বে বাংলাদেশে কার্যক্রম বাড়াচ্ছে উইন্ডহ্যাম হোটেলস
দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় অতিরিক্ত ভাড়া ও নিম্নমানের সেবার অভিযোগের পর, পর্যটন মন্ত্রণালয় সারাদেশের জেলা প্রশাসনকে অবৈধ হোটেল চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেলের কন্ট্রোলার মোহাম্মদ আতাউর রহমান বুধবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, 'আমরা অভিযোগ পেয়েছি যে, অনেক অর্নিবন্ধিত হোটেল দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় পরিচালিত হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ নিজেরাই নিজেকে স্টার হোটেল হিসেবে প্রচার করছে, অথচ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অনুমোদনই নেয়নি।'
তিনি জানান, তিন সপ্তাহ আগে দেশের সব জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে যেসব হোটেলের লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন [নিবন্ধন] নেই তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা হাতে পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য পর্যটন খাতে সেবার মান উন্নয়ন এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে সকল প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসা।
কক্সবাজারে অর্ধেক হোটেলই অর্নিবন্ধিত
দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে প্রায় ৫০০ হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও গেস্ট হাউজের মধ্যে অর্ধেকই জেলা প্রশাসনের কাছে নিবন্ধিত নয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
তিনি বলেন, 'নির্দেশনা পাওয়ার আগেই আমরা কয়েক মাস আগে পর্যটন মন্ত্রণালয়কে অর্নিবন্ধিত হোটেলের তালিকা পাঠিয়েছি। নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করাও হচ্ছে।'
পর্যটন মন্ত্রণালয় জানায়, যেকোনো হোটেল চালাতে হলে প্রথমে জেলা প্রশাসনের কাছে নিবন্ধন নিতে হয়। তবে তিন তারকা থেকে পাঁচ তারকা হোটেল চালাতে হলে অতিরিক্তভাবে মন্ত্রণালয়ের হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেল থেকে 'নো অবজেকশন সার্টিফিকেট' বা এনওসি নিতে হয়। পরে সেই এনওসির ভিত্তিতেই লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হিসেবে বর্তমানে দেশে ২০টি পাঁচ তারকা, ৭টি চার তারকা ও ২৪টি তিন তারকা হোটেল রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিহা) তথ্য মতে, দেশে প্রায় ২ হাজার বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে, যেগুলোর কোনো স্টার রেটিং নেই; কিন্তু সেখানে প্রায় ১ লাখ মানুষ কাজ করে।
পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন
অনেক পর্যটক বলছেন, বাংলাদেশে হোটেল ভাড়া পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় সেবার মান খারাপ, এবং অভিযোগ জানানোর সুযোগও সীমিত। মৌসুমের সময় হোটেল ভাড়াও হঠাৎ করেই বেড়ে যায়—স্টার ক্যাটগরির হোটেল রুমের ভাড়া ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকায়ও পৌঁছায়।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের বলেন, 'একজন পর্যটক যে দামে ব্যাংককে থাকতে পারেন, সেই দামে তিনি কক্সবাজারে থাকতে পারেন না।' তিনি জানান, হোটেল সরঞ্জামে উচ্চ আমদানি শুল্ক এবং ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার (১২ থেকে ১৩ শতাংশ) এই খরচ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
তার মতে, অনেক হোটেল মিথ্যা দাবি করে স্টার হোটেল হিসেবে নিজেদের প্রচার করছে এবং দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে, অথচ তাদের সরকারি অনুমোদন বা যথাযথ সেবা ও মান নেই। এখন থেকে এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করবে মন্ত্রণালয়ের হোটেল সেল।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম জানান, তাদের ১৪০টি সদস্যপ্রতিষ্ঠান সবই নিবন্ধিত এবং জেলা প্রশাসনও জানে কোন হোটেল বৈধ, কোনটি নয়।
অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারসহ দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাগুলোর অর্নিবন্ধিত হোটেল থেকে প্রতিবছর সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে।
সীগাল হোটেলের প্রধান নির্বাহী মাসুম ইকবাল বলেন, 'সরকারি অনুমোদন ছাড়া কেউ স্টার হোটেল পরিচালনা করতে পারে না।'
বাংলাদেশসহ চার দেশে ৬০টি হোটেল চালু করতে উইন্ডহ্যাম-সিগনেট চুক্তি
বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে ব্যবসা সম্প্রসারণে নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্বে যাচ্ছে উইন্ডহ্যাম হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস। প্রতিষ্ঠানটি সিগনেট হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টসের সঙ্গে যৌথভাবে আগামী ১০ বছরে এসব দেশে ৬০টিরও বেশি হোটেল চালুর পরিকল্পনা করেছে।
১৪ জুলাই টোর্নোস নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে 'লা কুইন্টা বাই উইন্ডহ্যাম' এবং 'রেজিস্ট্রি কালেকশন হোটেলস' ব্র্যান্ডগুলোও আনা হবে দক্ষিণ এশিয়ার এই চার দেশে।
চুক্তির অংশ হিসেবে উইন্ডহ্যাম ও সিগনেট একচেটিয়া ১০ বছরের একটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টে স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে বিশেষ করে 'লা কুইন্টা বাই উইন্ডহ্যাম' ব্র্যান্ডের বিস্তারে জোর দেওয়া হবে।
এর আগে থেকেই উইন্ডহ্যাম, দক্ষিণ এশিয়ায় রামাদা বাই উইন্ডহ্যাম, হাওয়ার্ড জনসন এবং উইন্ডহ্যাম গার্ডেন ব্র্যান্ডে ৭০টিরও বেশি হোটেল পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি 'রামাদা বাই উইন্ডহ্যাম কক্সবাজার কলাতলী বিচ' চালুর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের যাত্রা শুরু করেছে। এটি উইন্ডহ্যামের প্রথম হোটেল বাংলাদেশে।