পরিবারসহ এস আলমের বিদেশি বিনিয়োগ ও সম্পদ অবরুদ্ধের আদেশ

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম), তার স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নামে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা বিপুল পরিমাণ ব্যাংক হিসাব, বীমা পলিসি ও বিনিয়োগ অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। আবেদনে প্রতিনিধিত্ব করেন দুদকের উপপরিদর্শক তাহসিন মোনাবিল খান।
আদেশ অনুযায়ী, সাইফুল আলমের নামে সিঙ্গাপুরে ৪০টি ব্যাংক হিসাব ও একাধিক বীমা পলিসি, তার স্ত্রীর নামে ৪টি ব্যাংক হিসাব এবং দু'জনের যৌথ নামে দুইটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬ কোটি ৮০ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার বিনিয়োগ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া তিনি নিজে চারটি এবং তার স্ত্রী আরও চারটি কোম্পানির পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার।
তাদের ছেলে আশরাফুল আলমের নামে দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ও হিসাব রয়েছে, পাশাপাশি তিনি একটি কোম্পানির পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার। অপর সন্তান আহসানুল আলমের নামে একটি কোম্পানির পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার হিসেবে সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ৮টি ব্যাংক হিসাব ও বীমা পলিসি।
পরিবারের আরও এক সদস্য আহমেদ বেলালের নামে দুটি ব্যাংক হিসাব এবং কন্যা মাইমুনা আলমের নামে একটি বীমা পলিসি ও সিঙ্গাপুরে ৫৪ হাজার ৪০০ সিঙ্গাপুরি ডলার মূল্যের সম্পদ রয়েছে। এছাড়া ছোট ছেলে আসাদুল আলম মাহিরের নামে রয়েছে আরও একটি ব্যাংক হিসাব।
আবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত পরিবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করে এসব সম্পদ অর্জন করেছে। এসব সম্পদের স্থানান্তর বা ধ্বংস ঠেকাতে আদালতের জব্দ ও স্থগিতাদেশ একান্ত প্রয়োজন।
বিদেশে সম্পদ জব্দের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম টিবিএসকে বলেন, 'সম্পদ অবরুদ্ধের আদেশটি সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে কনসার্ন দেশকে পাঠানো হয়। এরপর আমাদের দেশের আইন অনুসারে কনসার্ন দেশের লিগ্যাল অথরিটি সেই আদেশ বাস্তবায়ন করেন। এভাবে দেশের বাহিরে অবস্থিত সম্পদ (ক্রোক) অবরুদ্ধের আদেশ কার্যকর করা হয়।'
এর আগে, গত ৯ জুলাই এস আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা আরও ৫৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেন আদালত, যেখানে ১১৩ কোটি ৯ লাখ ৮২ হাজার ৮৬৮ টাকা রয়েছে।
গত ২৪ জুন সাইপ্রাসের লিমাসলে অবস্থিত সাইফুল আলমের একটি দুইতলা বাড়ি, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে হ্যাজেক ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেডে তাদের বিনিয়োগকৃত ৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, পিকক প্রপার্টি হোল্ডিংসসহ আরও ১৮টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ এবং জার্সি ট্রাস্ট কোম্পানির অধীনে ছয়টি ট্রাস্টে থাকা অর্থও জব্দের নির্দেশ দেন আদালত।
গত ২৩ এপ্রিল তার ১৫৯ একর জমি (মূল্য ৪০৭ কোটি টাকা), ১৭ এপ্রিল এক হাজার ৩৬০টি ব্যাংক হিসাব (যেখানে দুই হাজার ৬১৯ কোটি ৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা রয়েছে) এবং ১০ মার্চ তার এক হাজার ছয় বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত।
৯ এপ্রিল তার ৯০ বিঘা জমি এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি ৮ হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার শেয়ার এবং ৩ ফেব্রুয়ারি ১৭৫ বিঘা জমি (মূল্য ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা) জব্দের আদেশ দেওয়া হয়।
১২ ফেব্রুয়ারি সাইফুল আলমের ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪টি শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়, যার মোট মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।