প্রধান বিচারপতি নিয়োগে দুটি বিষয়ে ঐক্যমত, এই মাসেই সনদ প্রস্তুতের বিষয়ে আশাবাদী: আলী রীয়াজ

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত দুটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। পাশাপাশি চলতি মাসেই সনদ প্রস্তুত করার বিষয়ে আশাবাদ জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত দুটো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। সংবিধানের বিদ্যমান ৯৫ নম্বর অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের বিষয়ে ঐক্যমত তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্যে থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন। বিদ্যমান নিয়মানুযায়ী রাষ্ট্রপতির কোন বাধ্যবাধকতা নেই যে আপিল বিভাগ থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন।
জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের দ্বিতীয় ধাপেএকাদশতম দিনের আলোচনার পর বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।
এসময় তিনি বলেন, দুটি কারণে এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত ঐক্যমত আসেনি। কারণ আপিল বিভাগের কর্মে জ্যেষ্ঠতম একজনকে না দুইজনের মধ্যে থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হবে। এটা নিয়ে দুটো মত আছে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করেছি মতামত পুনর্বিবেচনা করে আরও সুনির্দিষ্টভাবে অগ্রসর হওয়া যায় কি না।
আলী রীয়াজ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আমরা আরও একটু অগ্রসর হয়েছি। বিগত আলোচনার ভিত্তিতে আজকে ঐক্যমত কমিশন প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ নিয়ে দুটো প্রস্তাব দিয়েছিল, যার মূল বিষয় ছিল আইনসভা থেকে প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করা।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে দলগুলো মতামত দিয়েছে, সে পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যমত কমিশন আরও সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখবে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো চাচ্ছে কার্যত যতদূর সম্ভব একটি ত্রুটিহীন ব্যবস্থা হয়, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের আকাঙ্খার প্রতিফলন হয় এবং ভবিষ্যতে বিতর্কের মুখে না পড়ে। এসমস্ত বিষয় মাথায় রেখেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
জরুরি অবস্থা নিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, জরুরি অবস্থার বিধান সংশোধনে গত সভায় সবাই একমত হয়েছে। এখন বিষয়গুলোকে আরও সুস্পষ্ট করার জন্য আলোচনা চলমান আছে। যেমন: অভ্যন্তরীণ গোলযোগ না রাখার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। এখন কীভাবে, কখন, কোন অবস্থায় জরুরি অবস্থা বহাল থাকবে সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কেউ বলছে মন্ত্রীসভায় আলোচনা করে, আবার কেউ বলছে পার্লামেন্টে আলোচনা করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার বিষয়ে। আলোচনা এখনও চলমান আছে।

আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে, যার থেকে আমরা আশাবাদী হতে পারি যে এ মাসের মধ্যে আমরা একটি সনদ প্রস্তুত করতে পারব। প্রতিনিই আমরা বেশ খানিকটা অগ্রসর হচ্ছি। কারণ এগুলো তাড়াহুড়োর বিষয় না।
তিনি বলেন, ক্ষেত্রবিশেষে শব্দ, বাক্য বিবেচ্য হচ্ছে। সেগুলো বিবেচনা করেই আমরা অগ্রসর হচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলো সম্পূর্ণ আন্তরিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ অবস্থায় এখানে আসছে, পরস্পরের মতামতকে শ্রদ্ধা করছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই মাসের মধ্যে জাতীয় সনদের দিকে যেতে পারব।
এর আগে আজ সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার শুরুতে আলী রিয়াজ বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের মতানৈক্য নেই। সবাই একই উদ্দেশ্যে কাজ করছে এবং এ মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ প্রস্তুত সম্ভব হবে।'
যে সব বিষয়ে আলোচনা অগ্রসর হয়েছে, তা কমিশন দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চায় বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'প্রথম পর্যায়ের দুমাসের আলোচনায় অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা জাতীয় সনদ তৈরির ক্ষেত্র অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলোতে একমত হওয়া প্রয়োজন।'
'রাষ্ট্রকে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে, যাতে করে ভবিষ্যতে কখনো ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরে না আসে', যোগ করেন কমিশনের এই সহসভাপতি।
আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনায় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত আছেন বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।