রপ্তানি পণ্যে ৩৫% মার্কিন শুল্ক, অর্থনীতিতে চাপের আশঙ্কা

মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান ভিত্তি, এ শুল্কের কারণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বাজারে দেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ পণ্য পাঠানো হয়। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা না থাকায় ইতোমধ্যেই মার্কিন বাজারে বাংলাদেশ কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে রয়েছে। নতুন এই শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের পণ্যগুলো আরও বেশি অপ্রতিযোগিতামূলক হয়ে পড়তে পারে, যার ফলে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বহু কারখানার ওপর—বিশেষ করে যেগুলো মার্কিন ক্রেতার ওপর নির্ভরশীল। অনেক কারখানার টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়তে পারে, যার প্রভাব পড়বে শ্রমিকদের ওপর। এই পেশায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিকই নারী, যারা পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী।
এছাড়া, তৈরি পোশাক খাতের সহায়ক শিল্প যেমন—প্যাকেজিং, পরিবহন এবং এর সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও এই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন।
চীন ও ভিয়েতনামের মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার কম বৈচিত্র্যময় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও সীমিত। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে—ফলে বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসা, যাতে শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা বা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যায়।
একই সঙ্গে, এটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও শিল্প বহুমুখীকরণের গুরুত্বকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে; যেকনো একটি খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দেশের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশকে চামড়া ও জুতা শিল্প, ওষুধশিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি ও আইটি-নির্ভর পরিষেবা, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং ব্লু ইকোনমি খাতের বিকাশে জোর দিতে হবে।
দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক জোরদার করাও ভবিষ্যতের জন্য স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি; ফলে এই শুল্ক আরোপের ঘটনা আগামী দিনে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ ও শিল্প বহুমুখীকরণের প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্টভাবে সামনে এনেছে।
লেখক: ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সাবেক সভাপতি।