গাজীপুরে ঝুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, ফাঁকা গুলি

গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি পোশাক কারখানার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে আবারো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তত ১৫-২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলির শব্দ শোনা গেছে।
শনিবার (২৮ জুন) দুপুর পৌনে ১টার দিকে টঙ্গী পশ্চিম থানার গাজীপুরা এলাকার স্যাটার্ন টেক্সটাইল ও হোপলুন কারখানার সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে স্যাটার্ন টেক্সটাইল কারখানার ঝুট মালামালের ব্যবসা নিয়ে গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হালিম মোল্লা ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী হুমায়ুনের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
আজ দুপুরে কারখানা থেকে ঝুট নিতে যান কাজী হুমায়ুন। এ সময় হালিম মোল্লার অনুসারী আল মামুনসহ বহু সমর্থক কারখানার ভেতরে গেলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষ চলাকালে দুই পক্ষের লোকজন ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও অন্তত পাঁচ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। এতে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আহতরা হলেন, রাসেল (৩০), মাহবুব হোসেন (৩২), বাবু মিয়া (২৮), আনোয়ার হোসেন (৩৫), ফরহাদ মিয়া (২৬), হাফিজুল ইসলাম (৩৩), শিপন (২৯), মাসুম (৩৭) ও হানিফ মোল্লা (৩১)। তাদের টঙ্গীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
কারখানার পাশে ফুটপাতের ফল ব্যবসায়ী রমজান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, মালামাল কিনে এসে দোকান বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ লোকজনের হট্টগোল এবং দুই পাশ থেকে লোকজনের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের হাতেই দেশীয় অস্ত্র ছিল। সংঘর্ষের কিছুক্ষণ পর বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরণ ও পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলির শব্দ শোনা যায়। কারো হাতে পিস্তলও দেখেছি।
কাজী হুমায়ুনের ভাষ্য, 'কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার প্রতিষ্ঠান নূর এন্টারপ্রাইজের মধ্যে চুক্তিপত্রের (ডিড) মাধ্যমে গত ১০ আগস্ট থেকে স্যাটার্ন কারখানার বর্জিত মালপত্র কিনে নিচ্ছি। আজ দুপুরে আমি কারখানায় যাই। পরে আল-মামুন, কাজী মামুন, জসিম উদ্দিন, তুহিন, আদনানসহ তাদের শতাধিক সমর্থক কারখানার ভেতরে ঢোকেন। পরে আমার লোকজন ধাওয়া দিলে তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান।'
গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হালিম মোল্লার অনুসারী এবং টঙ্গী পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য আল মামুন দাবি করেন, 'ঝুট ব্যবসার আয়ে বিএনপি শক্তিশালী হওয়ার বদলে কিছু নেতা আওয়ামী লীগকে সহযোগিতায় ব্যবহার করছেন। কাজী হুমায়ুন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।'
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসকান্দার হাবিবুর রহমান জানান, কারখানার ঝুট নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গুলি বর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। কেউ আহত হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো (রাত ৯টা) কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, 'কে কোন দলের সেটা মুখ্য নয়। যারা এ ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।'
প্রসঙ্গত, গত ২৩ মে একই কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ে একই স্থানে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওইদিনও ককটেল বিস্ফোরণ, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং সাংবাদিকসহ অন্তত ১০-১৫ জন আহত হন।
ওই ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানায় পৃথক দুটি মামলা হলে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করে।