বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটা রাজনৈতিক ট্যাগ থাকেই: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সাধারণত কোনো না কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে চিহ্নিত থাকেন বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটা না একটা ট্যাগ থাকেই; হয় সাদা দল, না হয় নীল, কিংবা অন্য কিছু।'
শনিবার (২১ জুন) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে 'এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট' শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড)। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
উপাচার্য নিয়োগে কী ধরনের মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছিল প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'আমি যাদের কাছ থেকে তালিকা চেয়েছিলাম, তাদের কিছু মানদণ্ড বলে দিয়েছিলাম—যেমন সাইটেশন সংখ্যা, সততা, দক্ষতা ইত্যাদি। পাশাপাশি রাজনৈতিক অবস্থানও বিবেচনায় নিতে বলেছিলাম। আওয়ামী লীগ তো হওয়া যাবে না, কাজেই মৃদু বিএনপি হওয়া যাবে, অথবা নিষ্ক্রিয় বিএনপি।'
তিনি জানান, এই বক্তব্য বিএনপির ভেতরেও হাস্যরসের জন্ম দিয়েছিল। উপদেষ্টা বলেন, 'বিএনপির লোকজন বলে, উনি (উপদেষ্টা) আমাদের কাউকে নেন না, দীর্ঘদিন ধরে যারা বঞ্চিত, তাদেরও না—উনি শুধু নিষ্ক্রিয় বা মৃদু বিএনপিকে নেন। কথাটা খুব প্রচলিত আছে।'
উপাচার্য নিয়োগে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া কঠিন ছিল বলেও জানান তিনি। বলেন, 'নির্দলীয় সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো এতগুলো পদ খালি থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত লোক পাওয়া যায় না। কারণ আমরা রাজনৈতিক দলের লোক নই, তাই কাউকে চেনাও কঠিন।'
এমন পরিস্থিতিতে তিনি নিজ উদ্যোগে বন্ধু ও পরিচিতদের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেছেন বলে জানান। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকেও তার কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'শিক্ষাজীবনে আমার বন্ধু ও রুমমেট ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাকে বলেছিলাম, তুমি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে বন্ধু হিসেবে তোমার পরিচিতদের কাছ থেকে শিক্ষা ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নিয়োগের উপযোগী সৎ লোকদের একটি তালিকা দাও। তোমরা তো একসময় সরকারে ছিলে, অনেক লোক চেনো।'
তিনি আরও বলেন, 'তখন ফখরুল বলেছিল, "গত ১৫ বছরে আমাদের কেউ তো কোনো জায়গায় ছিল না। কে দুর্নীতিবাজ, কে দক্ষ—আমি কীভাবে বুঝব?" সে বন্ধুর মতো করেই বলেছিল, বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়েছিল। তবে বিএনপির পক্ষ থেকেও আমাকে তালিকা দেওয়া হয়েছিল।'
আলোচনার শেষ দিকে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'আমরা যখন দায়িত্ব ছেড়ে যাব, কী কী কাজ করেছি তা লিস্ট করে রেখে যেতে চাই। প্রচারের জন্য নয়, বরং যাতে পরবর্তী সরকার তা উদাহরণ হিসেবে দেখতে পারে এবং কেউ তা থেকে বিচ্যুত হলে সেটা সবার চোখে পড়ে।'