সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ অবশ্যই পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে: আসিফ নজরুল

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, 'উপদেষ্টা ফাওজুল ভাইসহ একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন অবশ্যই আইনটি পুনর্বিবেচনার অবকাশ রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আইন প্রণয়নের সময় আমি বিদেশে ছিলাম। পরবর্তীতে যখন আমি এটি দেখেছি আমার কাছে মনে হয়েছে অবশ্যই এটি পুনর্বিবেচনার স্কোপ রয়েছে।'
আজ সোমবার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আসিফ নজরুল। তিনি জানান, আজ বিকেল ৪টায় সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় গঠিত কমিটি সভা করবে। তিনি সচিবালয়ের কর্মচারীদের কমিটির সুপারিশ এবং উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
যদিও সোমবার সকালেই সচিবালয়ের কর্মচারীরা এই আইন বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
আইনের বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, সরকার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে আইনটি করে নাই। তবে কারও মনে হতে পারে, আইনের বিধানের কারণে বিড়ম্বনা ও হয়রানি করার সুযোগ রয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, সোমবার বিকেল ৪টায় পর্যালোচনা কমিটি মিটিং করবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা আমাদের রিপোর্ট উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তুলব।
সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমি অনুরোধ করব আপনারা ধৈর্য ধরে কর্মসূচি দিলে ভালো হয়। আপনারা আমাদের সাথে মিটিং করেন কিন্তু সরকারি কাজে যেন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়। মানুষের যাতে দুর্ভোগ না হয়।
ক্ষোভে ফুঁসছেন কর্মচারীরা
এদিকে সরকারি কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতৃত্বে সচিবালের কর্মচারীরা সকালে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। পরে সচিবালয়ের নতুন ভবনের নিচে তারা সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীরা বক্তব্য রাখেন। তারা আইনটিকে নিবর্তনমুলক উল্লেখ করে অবশ্যই বাতিলের দাবি জানান।
মুজাহিদুল ইসলাম নামের একজন বলেন, 'আপনারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, আপনারা কয়েকদিনের জন্য এসেছেন। আপনারা কেন সরকারি কর্মচারীদের বিরোধের মুখোমুখি ফেললেন। আপনারা উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলছেন।'
আগামীকাল থেকে উপদেষ্টার দপ্তর ও সচিবদের দপ্তরের সকল কর্মচারীকে সমাবেশে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেন সমাবেশের একজন বক্তা।
সচিবালায় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের একাংশের সভাপতি বাদিউল কবির খান বলেন, কর্মচারীদের আচরণ পরিশীলিত। অনুগত, সুশৃঙ্খল কর্মচারী। এই নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এই সুশৃঙ্খল কর্মী বাহিনীকে আপনারা কাজের বাইরে রাখার পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। আমরাও জনদুর্ভোগ বাড়াতে চাই না। ঢাকা মেডিকেলসহ সকল মেডিকেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারীরা যদি কাজ থেকে বিরত থাকে জনদুর্ভোগ বাড়বে, এটা সরকারকে মনে রাখতে হবে।
ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছাত্ররা যে কর্মচারীদেরকে দুর্নীতিবাজ বলে উল্লেখ করছে সেটা না জেনে করছে। আজকের ছাত্ররা আগামী দিনে এইসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী হবে। আইন তাদের জন্য নিবর্তনমূলক হবে। আমাদের এই প্রতিবাদ শুধু আমাদের জন্য নয় ভবিষ্যতের কর্মীদের জন্যও।
সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আরেক অংশের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, এটি হাস্যকর আইনে রূপান্তরিত হয়েছে। আইনের বিপক্ষে বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের কর্মীরা আন্দোলনে নেমে গেছে ইতিমধ্যে।
তিনি আরও বলেন, 'এই আইন করার অধিকার তাদের নাই। আমরা তাদেরকে ধিক্কার জানাই। আমরা এই আইন প্রত্যাখ্যান করলাম।'
সমাবেশের পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন কর্মচারীরা।