ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুবাতাস আনবে: রিজভী

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য সুবাতাস বয়ে আনবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (১১ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি এই বৈঠক ইতিহাস সৃষ্টি করবে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রে এক নতুন গতি আনবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক।'
রিজভী বলেন, 'ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের আনুষ্ঠানিক বৈঠকের দিকে এখন গোটা জাতি তাকিয়ে আছে, এবং তা আশা ও আনন্দের উৎস হয়ে উঠেছে।'
তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই বৈঠক 'দুর্ভাগা গণতন্ত্র'কে রক্ষা ও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
'এই বৈঠক ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন রোধ এবং আগ্রাসী শক্তির হাতে গণতন্ত্র ধ্বংস হওয়া ঠেকাতে সহায়ক হবে। এটি দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার ও টেকসই করতেও ভূমিকা রাখবে,' বলেন বিএনপির এই নেতা।
নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছে।
'দেশের মানুষও মনে করে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হওয়া উচিত। আলোচনা চলছে… ফলাফল পরে জানা যাবে,' বলেন রিজভী।
তিনি আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচনসহ বিদ্যমান জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধানের পথ তৈরি হতে পারে।
এর আগে মঙ্গলবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, যুক্তরাজ্যে সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে ১৩ জুন লন্ডনে তারেক রহমানের আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বৈঠকটি লন্ডনের একটি হোটেলে হবে, যেখানে বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা অবস্থান করছেন।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, দেশটি বাংলাদেশের প্রতি ক্রমবর্ধমান শত্রুতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করছে এবং সীমান্ত দিয়ে লোক ঠেলাঠেলি করে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
'এই প্রতিবেশী দেশটি বিপজ্জনক মাত্রায় শত্রুতাপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার পতন নিয়ে তারা দিন দিন আগ্রাসী হয়ে উঠছে,' বলেন তিনি।
ভারত থেকে 'বিদেশি' তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে পুশ ইন করে লোক ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে রিজভী বলেন, সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই এমন ঘটনা ঘটছে।
'ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি ও সংঘাত বাধানোর অপচেষ্টা চলছে। সীমান্ত জুড়ে এখন পুশ ইনের হিড়িক পড়েছে। বাংলাদেশ কি আবর্জনা ফেলার স্থান?'—প্রশ্ন করেন তিনি।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি ভারত বিদেশিদের বাংলাদেশি বলে ঠেলে পাঠাতে চায়, তাহলে শুধু প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধও গড়ে তোলা হবে।
রিজভী আরও বলেন, ভারতকে মনে রাখতে হবে যে, এক সময় শেখ হাসিনার মতো একজন স্বৈরশাসকও নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে পারেননি এবং দিনের আলোতেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
সম্প্রতি ভারতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, 'ভারতে ইতোমধ্যে ৭ হাজারের বেশি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, আর বাংলাদেশেও কিছু রোগী শনাক্ত হয়েছে।'
তিনি সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা তুলে ধরে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, ডেঙ্গুর পরিস্থিতিও খারাপ হয়েছে এবং তা এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছে। 'এই সংকট মোকাবেলায় সরকারকে জনগণের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে।'
ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, 'দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে গাড়ি চালানোর কারণে প্রায় ৫৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।'
'ঈদের সময় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে ঈদের আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করা যায়নি,' বলেন রিজভী।