ঈদের ছুটি: রোদ আর উত্তাল সাগরেও সৈকতে পর্যটক, স্থানীয়দের ভিড়

ঈদুল আজহার প্রথমদিনে পর্যটকের উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও—দ্বিতীয়দিন রোববার থেকে জনসমাগম বাড়তে শুরু করেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। পর্যটনখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে কক্সবাজারের সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৫০ শতাংশের বেশি কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
তাদের হিসাবে, আজ রোববার (৮ জুন) কক্সবাজারে আগত পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। সোমবার থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
পর্যটকদের পাশাপাশি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে রোববার দিনভর পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধবদের সাথে সাথে গেছে স্থানীয়দের।
এদিকে কক্সবাজারের গত দুইদিন ধরে তীব্র রোদ ও ভ্যাপসা গরম আবহাওয়া। এমন পরিস্থিতি সাগরও একটু স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে উত্তাল বলে জানিয়েছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা। তাই সমুদ্র স্নানে ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা-ও। এটি সমুদ্র স্নানে সর্তক থাকার বার্তা দিলেও তা মানছেন না পর্যটকসহ সৈকতে ভ্রমণকারীরা।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দায়িত্ব পালন করা সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার ইনচার্জ মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, তীব্র রোদ আর সাগরও উত্তাল। ৩টি পয়েন্টেই গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তাই সৈকতের বালুচরে লাল পতাকা টানানো হয়েছে পর্যটকদের সতর্ক করতে। কিন্তু কেউ তো তা মানছেন না। তাই লাইফ গার্ড কর্মীরা সব্বোর্চ সতর্ক রয়েছেন। সমুদ্রস্নানে দূর্ঘটনা এড়াতে তিন স্তরের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, 'রোববার কক্সবাজারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬৫ শতাংশ। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা উভয়ই বেশি থাকার জন্য অত্যাধিক গরম অনুভূত হচ্ছে।'
রোববার বেলা ১১টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের ৩টি পয়েন্টের নোনাজলে হাজার হাজার পর্যটক, স্থানীয় অধিবাসী মেতেছেন সমুদ্রস্নানে। অনেকেই টিউবে গা ভেসে বেড়াচ্ছেন, কেউবা ব্যস্ত প্রিয় মুহুর্তগুলো ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করতে। কেউবা চড়ছেন ঘোড়ার পিঠে কিংবা বিচ বাইকে। অনেকেই কিটকটে বসে উপভোগ করছেন সমুদ্রের দৃশ্য।
ঢাকা থেকে আসা মীর মাহবুব বলেন, টানা ছুটিতে পরিবারকে সময় দিতে কক্সবাজার ছুটে এসেছি। আরেক পর্যটক সোয়েব করিম বলেন, সাগর উত্তাল থাকায় লাল পতাকা টানানো হয়েছে বালুচরে। কিন্তু ঈদ আনন্দ কি এসব মানে। তাই সমুদ্র নেমে গোসল করছি, আনন্দ করছি বন্ধুদের নিয়ে।
ঢাকার মিরপুর থেকে এসেছেন রফিকুল ইসলাম, তিনি বলেন, পরিবার সঙ্গে নিয়ে এসেছি, এখানে সাগরের সামনে সবাই মিলে আনন্দ করছি।
ইব্রাহীম নামের আরেক পর্যটক বলেন, ঈদের দিন সৈকতে পর্যটক কম হবে মনে করেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি বিকেলে পর্যটকের চাপ বেড়েছে। তবে সাগরপাড়ে মানুষ বেশি থাকলে দেখতে ভালোই লাগে।

কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানিয়েছেন, 'ঈদের প্রথমদিন পর্যটক উপস্থিতি তেমন ছিল না। দ্বিতীয়দিন থেকে পর্যটক বাড়তে শুরু করেছে। এতে সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৫০ শতাংশের কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।' সোমবার শতভাগ হোটেল কক্ষ বুকিংয়ের আশা তাদের।
ট্যুরিষ্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার নিত্যানন্দ দাশ বলেন, 'ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভ্রমণকে আনন্দমুখর করতে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণের পাশপাশি সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে পুলিশ অবস্থান করছে। একদিকে মোবাইল টিম অন্যদিকে সাদা পোশাকে পুলিশ সমুদ্র সৈকতে টহল দিচ্ছে।'
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি বলেন, ঈদের ছুটিতে একাধিক মোবাইল টিম পর্যটকদের সকল ধরনের হয়রানি রোধে মাঠে কাজ করছে।
এদিকে, শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নয়, আগত পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনিন্দ্য সুন্দর মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, রামুর বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, শহরের বার্মিজ মার্কেট, রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড এবং ডুলাহাজার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ কক্সবাজার জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও।