আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন: জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা
প
আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একদিন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, '...আমাদের ওপর আপনাদের অর্পিত ম্যান্ডেট ন্যূনতম হলেও বাস্তবায়ন করে যেতে পারব—সে বিবেচনায় ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি।'
তিনি বলেন, 'পাশাপাশি, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।'
আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি ভাষণ দেওয়া শুরু করেন। ভাষণটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'সংস্কার, বিচার, নির্বাচন এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। সেই বিবেচনায় আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌছতে পারব বলে বিশ্বাস করি। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যা কি না জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায়, সে বিষয়ে আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পারব। এতে আমাদের উপর আপনাদের অর্পিত ম্যান্ডেট ন্যূনতম হলেও বাস্তবায়ন করে যেতে পারব।'
তিনি বলেন, 'প্রিয় দেশবাসী, আমি শুরু থেকেই বলেছি, পতিত স্বৈরাচার যেভাবে দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, সেখান থেকে নতুন করে যাত্রা শুরু করতে হলে ন্যূনতম তিনটি আবশ্যিক কাজ সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমত: বিচার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দৃশ্যমান করে তোলা, রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সংস্কার সাধনে প্রয়োজনীয় ঐকমত্য ও পথ নকশা তৈরি করা এবং তৃতীয়ত: একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা হস্তান্তরের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ও এ লক্ষ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্থায়ীভাবে সংস্কার করা।'
তিনি আরও বলেন, 'এই তিনটি ম্যান্ডেট হচ্ছে দেশবাসীর সাথে আমাদের চুক্তি। ২৪ এর শহীদদের রক্তে ভেজা এই চুক্তি আপনাদের সার্বিক সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে এবং পতিত শক্তি ও তার দোসরেদের সৃষ্ট সব বাধা বিপত্তিকে পরাভূত করে আমরা সম্মিলতভাবে (এ চুক্তি) বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।'
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'আগামী জুলাই মাসেই সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্বের ভিত্তিতে একটি জুলাই সনদ প্রস্তুত করে আমরা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব বলে আশা করছি। জুলাই সনদ হলো একটি প্রতিশ্রুতি। একটি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছে, সেগুলোর মধ্য থেকে রাজনৈতিক দলগুলো যে কয়টিতে একমত হয়েছে তার তালিকা থাকবে এই সনদে।'
তিনি বলেন, 'জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে তারা জাতির কাছে সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে। জুলাই সনদ অনুযায়ী আশু করণীয় সংস্কার কাজগুলো আমরা বাস্তবায়ন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাকি অংশের বেশ কিছু কাজও আমরা শুরু করে যেতে চাই। আশা করি অবশিষ্ট অংশ পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে।'