ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জাতীয় সনদ’ ঘোষণা করা হতে পারে জুলাইয়ে: বদিউল আলম মজুমদার

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, আগামী জুলাই মাসে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ ঘোষণা করা হতে পারে। তবে এটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, "আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার মতবিনিময় শুরু হবে। আশা করছি, দ্বিতীয়বারের আলোচনায় আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। তার ভিত্তিতে একটি জাতীয় সনদ হবে। এই সনদে সবাই স্বাক্ষর করবে। আমরা আশা করছি, এটা জুলাইয়ে হতে পারে। এটা আমার আকাঙ্ক্ষা। এটা কোনো সিদ্ধান্ত না।"
আজ শনিবার (৩১ মে) দুপুরে জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা শীর্ষক নাগরিক সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বদিউল আলম মজুমদার। 'সচেতন, সংগঠিত ও সোচ্চার জনগোষ্ঠীই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ' স্লোগানে রংপুর আরডিআরএস মিলনায়তনে এ সংলাপের আয়োজন করে সুজনের রংপুর মহানগর কমিটি। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার খায়রুল আনাম।
এসময় তিনি আরও বলেন, "আমার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা, যেদিন আবু সাঈদ প্রাণ দিয়েছিল, যাঁর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ জেগে উঠেছিল, সেদিন যদি আমরা এটা করতে পারি, এটা আবু সাঈদ, মুগ্ধ যাঁরা শহীদ তাঁদের রক্তের ঋণ আমরা শোধ করতে পারব। জাতি হিসেবে আমরা ঋণমুক্ত হতে পারব।"
একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হলে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে সেমিনারে উল্লেখ করেন বদিউল আলম মজুমদার। এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, "ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ার কতগুলো পন্থা আছে। একটা পন্থা হলো এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী–শাসিত সরকার। অর্থাৎ মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সব সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রীর অগাধ ক্ষমতা।"
একই ব্যক্তি আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকলে তাঁর পক্ষে স্বৈরাচারী হওয়া স্বাভাবিক বলে মত দেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, "অতীতে যেটা ঘটেছে, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, সংসদ নেতা হয়েছেন। একই সঙ্গে দলীয় প্রধান হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হলো নির্বাহী বিভাগের প্রধান। সংসদ নেতা হলো আইনসভার প্রধান। একই ব্যক্তি যদি দুটো আসন অলংকৃত করেন, তাহলে ক্ষমতার বিভাজন নীতির বরখেলাপ।"
জুলাই প্রক্লেমেশন (জুলাই ঘোষণাপত্র) ও জুলাই সনদ এক কি না জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'জুলাই প্রক্লেমেশন হলো একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা। গত জুলাইয়ের আন্দোলন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তারা তুলে ধরবে। জাতীয় সনদ হবে একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব। রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে ও স্বাক্ষর করবে। তারা নির্ধারণ করবে কীভাবে এটা বাস্তবায়িত হবে। আমার মতে দুটো ভিন্ন জিনিস।'
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর যেসব সংস্কার দরকার, প্রার্থী নির্বাচনের জন্য যেসব প্রস্তুতি দরকার এখন থেকে শুরু করতে পারে। সরকারের সেসব সংস্কারের জন্য সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে না, সেসব সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের প্রয়োজন হবে না। সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করলে দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম হবে।