এটিএম আজহারুলের মুক্তির প্রতিবাদে মশাল মিছিলে হামলায় আহত ৫, অভিযোগ শিবিরের বিরুদ্ধে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে খালাস দেওয়ার রায়ের প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশাল মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) রাত পৌনে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট ও প্যারিস রোড এলাকায় দুই দফায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের চার নেতা ও একজন সাংবাদিক আহত হন।
আহতরা হলেন ছাত্রগণমঞ্চের সভাপতি নাসিম সরকার, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক তারেক আশরাফ, ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ কাইসার আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ সৈকত এবং দেশ রূপান্তরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নোমান ইমতিয়াজ।
অন্যদিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে সংগঠনটির সেক্রেটারি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট মশাল মিছিলের ডাক দেয়। তবে নির্ধারিত সময়ে মিছিল শুরু হয়নি। পরে 'শাহবাগ বিরোধী ঐক্য'-এর ব্যানারে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি পরিবহন মার্কেটের আমতলা এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
অন্যদিকে রাত ৮টা ১০ মিনিটে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট মশাল জ্বালিয়ে উচ্চস্বরে স্লোগান দিতে শুরু করলে শিবির কর্মীরা আমতলা এলাকায় তাদের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে। এ সময় উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এতে সাংবাদিক নোমান ইমতিয়াজ আহত হন।
এরপর মিছিলটি ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের দিকে গেলে শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাদের অনুসরণ করেন। প্যারিস রোডে পুনরায় মিছিলে বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় নাসিম সরকার সড়কে পড়ে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরে মিছিলকারীরা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সেখানে আবারও শিবির কর্মীরা উপস্থিত হয়ে স্লোগান দেন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, 'আমাদের মশাল মিছিলে প্রায় সবাই আহত হয়েছেন। চার নেতার শরীরে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।'
শাহবাগ বিরোধী ঐক্য-এর আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম বলেন, 'শাহবাগীরা ২০১৩ সালেও আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে ফ্যাসিবাদের বীজ রোপণ করেছিল। আজকের কর্মসূচি ছিল তাদের সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতিবাদে। আমরা শাহবাগ বিরোধী স্লোগান দিলে তারা উত্তেজিত হয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।'
ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মোজাহিদ ফয়সাল বলেন, 'এটি আদতে ছাত্রশিবিরের কর্মসূচি নয়, শাহবাগ বিরোধী ঐক্যের কর্মসূচি ছিল। সেখানে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা অংশ নিয়েছেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরাও ছিলেন। হাসিনা সরকারের বিচারহীনতার প্রতিবাদেই এ কর্মসূচি হয়েছে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, 'প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
হামলার প্রতিবাদে রাত ১০টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। জামাল নজরুল ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় তারা 'শিবিরের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না', 'নিরাপদ ক্যাম্পাস, ছাত্রদলের অঙ্গীকার' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।