ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি: তারেক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, 'রাজনৈতিক দলগুলো আবারও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে এবং জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ও সময় স্পষ্টভাবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে। বিএনপি দাবি করেছে, জাতীয় নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে হতে হবে।'
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জনগণ শিগগিরই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন দেখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারেক। তিনি বলেন, 'আমাদের এখনকার প্রত্যাশা হলো—জনগণ শিগগিরই সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে—যা হবে দক্ষ, যোগ্য এবং আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত এক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের নেতৃত্বে।'
সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে তারেক বলেন, জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক, নাগরিকদের সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে। দেশের জনগণ সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকার অবশ্যই জনগণের ন্যায্য দাবি মানতে বাধ্য। এখানে সরকারের মান-অভিমান বা রাগ-বিরাগের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক বৈধতার সংকট হয়তো নেই। তবে এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়। সরকার যেহেতু জবাবদিহিমূলক নয়, তাই নৈতিক কারণে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের কাছে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চিয়তায় রেখে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা কার্যকর ও টেকসই হয় না, হবেও না।
দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। যে কারণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিদিন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মুহূর্তে তাদের দাবি শোনার কেউ নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট পাসের ঠিক আগ মুহূর্তে এনবিআরের সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরি করেছে বলে মনে করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, এটি অর্থনীতির জন্য খুব ভালো বিষয় নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে বলে সবার বিশ্বাস।
তারেক বলেন, পতিত, পরাজিত ও বিতারিত ফ্যাসিবাদ যাতে কোনোভাবে ফিরতে না পারে- সেটাই হোক গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য। ফ্যাসিবাদের পথ রুদ্ধ করে রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তনের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার।
তিনি বলেন, সময়ের প্রয়োজনে সাংবিধানিক কিংবা আইনগত সংস্কার এবং প্রায়োগিক সংস্কারের বিকল্প নেই। অল্প কিংবা বেশি সংস্কার বলতেও কিছু নেই। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক প্রয়োজনে সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তবে আমার কাছে মনে হয় পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে প্রায়োগিক সংস্কার বেশি জরুরি।