চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: সমাবর্তন নিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আয়োজকরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২৩শ' একর সবুজ ক্যাম্পাস এখন এক উৎসবমুখর শহর। ব্যস্ততা, আনন্দ, সাজসজ্জা আর নিরাপত্তা সবই চবির পঞ্চম সমাবর্তনকে ঘিরে। দীর্ঘ ৯ বছর পর আয়োজিত এ সমাবর্তন দেশের ইতিহাসে অংশগ্রহণের দিক থেকে সবচেয়ে বড়।
আগামীকাল বুধবার (১৪ মে) এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন ২২ হাজার ৫৮৬ জন গ্র্যাজুয়েট।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে সমাবর্তন মঞ্চে রিহার্সাল পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। রিহার্সাল পর্বে সমাবর্তন শোভাযাত্রা, মঞ্চে সারিবদ্ধভাবে বসা, গাউন ও টুপি পরিধানের নিয়ম, সার্টিফিকেট গ্রহণের সম্ভাব্য অনুশীলন ও অতিথিদের আগমন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মতো আনুষ্ঠানিক দিকগুলো চূড়ান্তভাবে অনুশীলন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে বিরাজ করছে এক আবেগঘন পরিবেশ। গ্রাজুয়েটদের পদচারণায় মুখর ক্যাম্পাস। কেউ গাউন নিচ্ছেন, কেউ প্রিয় প্রাঙ্গণে ছবি তুলছেন, কেউবা বাবা-মাকে নিয়ে এসে শেয়ার করছেন জীবনের এক স্মরণীয় দিন।
সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তৈরি বিশাল প্যান্ডেলে বসার স্থান, অতিথিদের আলাদা স্টল, মেডিকেল কর্নার ও খাবারের ব্যবস্থাও প্রায় সম্পন্ন।নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে এসএসএফসহ একাধিক বাহিনী। পুরো ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হয়েছে এলইডি স্ক্রিন যাতে আমন্ত্রিত অতিথি ও অভিভাবকেরা সরাসরি অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন।
সমাবর্তন বক্তা হিসেবে থাকছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে 'ডক্টর অব লেটারস' ডিগ্রি দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানটি দুপুর ২টায় শুরু হয়ে শেষ হবে বিকেল ৪টায়।
এর আগে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে সমাবর্তন শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। সমাবর্তন উপলক্ষে নগরী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০০টি বাস ও শাটল ট্রেন। নিরাপত্তার কারণে ক্যাম্পাসে বন্ধ থাকবে ব্যক্তিগত যান চলাচল।
যোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের সমবর্তী শহিদুল সুমন বলেন, 'সমাবর্তন বুধবারে হলেও দুইদিন ধরে ক্যাম্পাসে সমাবর্তনের আমেজ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ৭ বছর পর আবারও সেই পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এমন অনেকে আছেন যাদের সঙ্গে শিক্ষা জীবনের পর কখনো দেখা হয়নি, সমাবর্তনের মাধ্যমে সে পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে। সবাই ছবি তুলছে, আড্ডা দিচ্ছে। এটা অন্য রকম এখন অনুভূতি। আমি নিজেও আমার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি। সেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট। এরকম আনন্দ ও সুন্দর মুহূর্ত আর হতে পারে না।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের নাঈমা আকতার সুমাইয়া বলেন, 'সমাবর্তনের মাধ্যমে আমাদের ক্যাম্পাস জীবনের পূর্ণতা লাভ করছে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আব্বুর না থাকাটাই সব থেকে বেশি মনে পড়ত। আব্বু অনেক খুশি হয়ছিল যে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় টিকছিলাম কারণ আব্বুর কাছাকাছি থাকতে পারবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নিটা আমার অতটা স্মুথ ছিল না যদিও কিন্তু আমি খুব ভালো মানুষকে পেয়েছি তাদের জন্য আমার ভার্সিটি লাইফটা খুব একটা খারাপ ও যায়নি।'
সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মুহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, 'আগামীকাল আমাদের সমাবর্তন আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছুই এসএসএফের নির্দেশনা মোতাবেক হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। নিরাপত্তা বাহিনী একাধিকবার মহড়া দিয়েছেন। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা দপ্তরের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিশাল টিম ভলান্টিয়ারের দায়িত্বে আছেন।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, 'আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আজকে রিহার্সেল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্যাম্পাসে ঈদের আমেজ বিরাজ করছে। আমাদের ২ মাসের পরিশ্রমের ঘাম আজ আনন্দে রূপান্তরিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আসছেন, ছবি তুলছেন পুরো ক্যাম্পাস মুখরিত। আমাদের বিভিন্ন উপকমিটি তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'ড. ইউনূসকে সম্মাননা দিতে পেরে আমরা নিজেরাই সম্মানিত হচ্ছে। তিনি বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব। শেষ ভালো যার সব ভালো তার। প্রোগ্রামকে সফলভাবে শেষ করতে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করছি।'