মুন্সীগঞ্জে এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের ধাক্কায় অ্যাম্বুলেন্সের ২ নারীসহ নিহত ৫, আটক ২

মুন্সীগঞ্জের নিমতলায় এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের ধাক্কায় অ্যাম্বুলেন্সের ২ নারীসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শিশুসহ আহত হয়েছেন আরও ৬ জন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলায় তালুকদার পাম্পের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
হাইওয়ের পুলিশের হাসাঁড়া থানার এসআই আব্দুর রহমান টিবিএসকে বলেন, বাস ও অ্যাম্বুলেন্সের দুর্ঘটনায় স্পটে একজন মারা গেছেন। আর বাকী ৪ জন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন।
তিনি আরও জানান, আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে আহত ও নিহতদের নাম পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিলো। সিরাজদিখানের নিমতলা এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সের চাকা পাংচার হয়ে বিকল হয়ে যায়। এ সময় মহাসড়কের পাশে অ্যাম্বুলেন্সের চাকা সংস্কার করার সময় গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস অ্যাম্বুলেন্সকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তারা আরও জানায়, বাসের চাপায় অ্যাম্বুলেন্সের এক নারী আরোহী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ৭ জন আরোহীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে আরও চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহেদ আল মামুন জানান, দূর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে এক নারীর মৃত্যু হয়। এছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় অপরাপর অ্যাম্বুলেন্স যাত্রীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে নেওয়ার পথে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
এদিকে, গোল্ডেন লাইন পরিবহনের দুই স্টাফকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- বাসের সুপারভাইজার ফরিদপুর জেলার কানাই লালের ছেলে কল্যান বিশ্বাস ও হেল্পার ঢাকার যাত্রাবাড়ীর আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে সাইফুল ইসলাম।
ঘটনার পর আজ বিকাল ৫ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন হাসাঁরা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জিলানী।
তিনি বলেন, 'দূর্ঘটনার পর ঘাতক বাসের চালক ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের আটক করতে অভিযান চালায় পুলিশ। পরে বাসের হেল্পার ও সুপারভাইজারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে আটক করা হয়। তবে, চালক এখনো পলাতক রয়েছেন।'
এছাড়া গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বাসটি জব্দ করে হাঁসারা হাইওয়ে পুলিশ ফাড়িতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
চলতি বছরে এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় ৩০টি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দুই ডজন ছাড়িয়ে গেছে। সড়কটি এখন মরণফাঁদে ও ডাকাতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের গত মাসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এক্সপ্রেসওয়েতে ১০টি দুর্ঘটনায় অন্তত ১০ জন প্রাণ হারান। ফেব্রুয়ারিতে আরও ১০টি দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত হন। এপ্রিলেও কমপক্ষে ৭টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা-ভাঙ্গা সংযোগে নির্মিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এক্সপ্রেসওয়েটি মূলত রাজধানীমুখী যাত্রাকে সহজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি প্রাণনাশের পথে পরিণত হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতার অভাব, ট্রাফিক নিয়মের প্রতি চরম অবহেলা, গতি নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের ঘাটতি এবং চালকদের বেপরোয়া গতিই এ সড়কটিকে দেশের অন্যতম প্রাণঘাতী রুটে পরিণত করেছে।
২০২০ সালের মার্চে এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর থেকেই দুর্ঘটনার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। উদ্বোধন থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত এখানে অন্তত ৭৯টি দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে ৬৫ জন নিহত ও ৬৭ জন গুরুতর আহত হন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, শুধু ২০২১ সালেই এখানে মোট ১৯৬টি দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে ৭৪ জন প্রাণ হারান এবং ২৬৫ জন গুরুতর আহত হন।