হেফাজতের দুঃখপ্রকাশকে সাধুবাদ, ভবিষ্যতে নারীদের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান এনসিপি নেত্রীসহ ছয় নারীর

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তিন নেত্রীসহ ছয়জন নারী জানিয়েছেন, নারীদের নিয়ে জনসমক্ষে অবমাননাকর ভাষা ব্যবহারের ঘটনায় পাঠানো আইনি নোটিশের প্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলামের দুঃখ প্রকাশকে তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং গ্রহণ করেছেন।
মঙ্গলবার (৬ মে) এক বিবৃতিতে তারা বলেন, 'ক্ষমা প্রার্থনাকে মেনে নিয়েই তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে ভবিষ্যতে টেবিল টক কিংবা পাবলিক ডিবেটের মাধ্যমে নারীদের সঙ্গে আলাপে অংশ নিতে।'
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুশফিকুর উস সালেহীন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ বিবৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যারা এ বিবৃতি দিয়েছেন, তারা হলেন—এনসিপি নেত্রী সৈয়দা নীলিমা দোলা, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ও নীলা আফরোজ, এবং লেখক উম্মে রায়হানা, উম্মে ফারহানা ও ক্যামেলিয়া শারমিন।
গতকাল তারা হেফাজতে ইসলামকে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, সংগঠনটির নেতারা নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের 'বেশ্যা' বলে উল্লেখ করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার হেফাজতে ইসলাম সংবাদ বিবৃতিতে ৩ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের সমাবেশে দুজন বক্তার 'অনাকাঙ্ক্ষিত' ও 'আপত্তিকর' শব্দচয়নের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে।
তবে ছয় নারী তাদের বিবৃতিতে হেফাজতের বিবৃতির কিছু অংশ নিয়েও উদ্বেগ জানান। তারা বলেন, ওই বিবৃতিতে নারীর সমঅধিকারকে 'পশ্চিমা এজেন্ডা' বলা হয়েছে এবং 'উগ্র নারীবাদীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে' বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
নারীরা হেফাজতে ইসলামকে 'ফ্রেমিং-এর রাজনীতি' থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'কারও মতের সঙ্গে না মিললেই তাকে কোনো না কোনো ট্যাগ দেওয়া যাবেনা। নারীর সমঅধিকার কোনোভাবেই পশ্চিমা এজেন্ডা নয়।'
তারা বলেন, নারীর সাম্য ও সামাজিক মর্যাদার বিষয় নারীই বুঝবে এবং নারীরাই যেন সেক্ষেত্রে এগিয়ে আসে।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'সকল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করাই আমাদের সকলের লক্ষ্য। কাজেই নারীদের ব্যাপারে বারবার প্রশ্ন উত্থাপন করে একটি সামাজিক চাপ সৃষ্টি করা অনুচিত।'
তারা বলেন, সমাজে সকলেই বিরাজ করবেন নিজ নিজ ক্ষমতায়—আর সেটিই সমাজের নিয়ম। 'আমরা আশা করব তারা [হেফাজতে ইসলাম] নিজেদের চিন্তা চেতনাকে আরও শানিত করবেন।'
২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তারা বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানই নারীদের শক্তি তথা ক্ষমতা বোঝার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পেছনে নারীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।'
তারা আশা প্রকাশ করেন, যেকোনো দ্বিমতে এক টেবিলে বসে কথা বলার পরিস্থিতি বজায় থাকবে এবং ভবিষ্যতে একটি সামাজিক চুক্তিতে আসা সম্ভব হবে।
নারীরা জানান, আইনি নোটিশের একটি কপি আইন অনুযায়ী হেফাজতে ইসলামের কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হবে এবং তারা আশা করেন, দলটি তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জবাব দেওয়ার পর নোটিশ প্রত্যাহার হয়ে যাবে।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, 'আমরা আশা করি নতুন বাংলাদেশ সবার হবে। আর এই দুঃখ প্রকাশের প্রক্রিয়াকে আমরা সাধুবাদ জানাই।'